X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসব ছাড়া দেখা মেলে না গরুর গাড়ির

মো. আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৯আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:০৫

উৎসব ছাড়া দেখা মেলে না গরুর গাড়ির

রাস্তাঘাটে সারি সারি গরুর গাড়ি চলার দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি হতে চলেছে। এখনও আগের মতো গরু আছে কিন্তু গরুর গাড়ি আর নেই। পহেলা বৈশাখসহ বছরের দুয়েকটি উৎসবে কদাচিৎ গরুর গাড়ি দেখা যায়। এছাড়া রাস্তাঘাটে গরুর গাড়ি দেখাই যায় না বলা যায়। গ্রাম বাংলার একসময়কার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। অথচ সাতক্ষীরার গ্রামাঞ্চলে একসময় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরার ৭ উপজেলার সব জনপদেই এক সময় গরুর গাড়ির দেখা মিলতো  কিন্তু এখন আর গ্রামগঞ্জের আগের মতো চোখে পড়ে না এই বাহনটি। অথচ দুই-তিন দশক আগেও জেলার ৭৮ ইউনিয়নের সব গ্রামের মেঠোপথে আহরহ গরুর গাড়ি দেখা যেত। এই গরুর গাড়ির আলাদা মর্যাদাও ছিল। দুটি গরু দিয়ে  জোড়া লাগানো গাড়ি চলতো ঠাই ঠাই করে। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে অন্য কোনও অনুষ্ঠানে মানুষ বহনের জন্য ছই ওয়ালা গরুর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনোকিছু কল্পনাই করতে পারতেন না গ্রামের মানুষ। এছাড়াও মাঠের ফসল আনা-নেওয়ার কাজেও গরুর গাড়ি ব্যবহৃত হতো। এমনকি ফসল কাটার পর ফাঁকা মাঠে গরুর গাড়ির প্রতিযোগিতা হতো। সেই বিশেষ প্রতিযোগিতাও এখন তেমনটা আর দেখা যায় না।

জানা গেছে, বাঁশ ও বাঁশের চটা দিয়ে ফ্রেম তৈরি করে গরুর গাড়ি বানানো হতো। সেই গাড়ির জন্য কামারের কাছ থেকে লোহার পাত সংযুক্ত করে চাকা তৈরি করা হয়। শতভাগ জ্বালানি বিহীন ও পরিবেশবান্ধব এই গরুর গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কোনও খরচও হতো না। শুধু গাড়ি বহনের জন্য দুটি গরুর পরিচর্যায় কিছু ব্যয় হতো।

উৎসব ছাড়া দেখা মেলে না গরুর গাড়ির

এ ব্যাপারে শ্যামনগরের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য যেমন মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস কিনি; ঠিক তেমনি কয়েক যুগ আগেও গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন লোকজন ও গৃহস্থরা নিজের ব্যবহারের জন্য গরুর গাড়ি তৈরি করে বাড়িতে রাখতেন। প্রয়োজনের সময় তা তারা বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন। মাঝেমধ্যে আবার ভাড়াও দিতেন।’

কলারোয়া চন্দনপুর গ্রামের ৮০ বছরের বেশি বয়সী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কলারোয়া উপজেলায় একসময় প্রতিনিয়ত গরুর গাড়ি চলত। কিন্তু এখন এসব জনপদে গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। অবশ্য এখনও মাঝে মধ্যে গ্রামাঞ্চলগুলোতে দুই-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়ে। কিন্তু সেগুলোর অবস্থাও নাজুক।’

সদর উপজেলার রাজার বাগান এলাকার প্রবীণ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা, গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নয়। আগে অনেকেরই উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল গরুর গাড়ি।’

কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মুনছুর আলী বলেন, ‘আমার বাবা-দাদারা গরুর গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করে আমাদের বড় করেছেন। এই আধুনিক যুগে গরুর গাড়ি নেই, আছে অটো বা ইঞ্জিন চালিত যানবাহন। গরুর গাড়ির ওপর মানুষের চাহিদা নেই। হুটহাট কোনও উৎসব ছাড়া এখন আর গরুর গাড়ির দেখা মেলে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে মালামাল বহন করার জন্য গরুর গাড়ির বিকল্প ছিল না। শুধু মালামালই নয়, বিয়ের জন্য বা আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র ভরসা ছিলো গরুর গাড়ি। মাঠের ফসল বহনের জন্য গরুর গাড়ির বিকল্প ছিল না, যদিও এখনও কদাচিৎ তা দেখা যায়।’

 

 

/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা