আমে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার ঠেকাতে এবং ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ ও মানসম্মত আম তুলে দিতে নওগাঁর আম বাগানগুলোতে চলছে পুলিশের টহল। পাশাপাশি রাসায়নিকে পাকানো আম বাজারজাতকরণ ঠেকাতে কৃষি বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ।
আমের জন্য বিখ্যাত নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলা। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অঞ্চলে আমের আবাদ। নওগাঁয় উৎপাদিত আম শুধু দেশেই নয়, যাচ্ছে দেশের বাইরেও। তাই আমের মান রক্ষায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার ঠেকাতে উচ্চা আদালতের আদেশকে স্বাগতম জানিয়েছেন নওগাঁর ভোক্তারা।
সাপাহার উপজেলার আমবাগান মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোনোদিনই ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগ করিনি। কিন্তু গাছে আম ধরে রাখার জন্য স্প্রে করতে হয়। এই স্প্রে’র বিষক্রিয়া প্রয়োগের সাতদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। বাগান থেকে আম যখন আড়তে যায় তখন কিছু অসৎ ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় আমে ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ করে। কিন্তু এ অঞ্চলের আম বাগানগুলো হাইব্রিড জাতের। তাই কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয় না। আগে সামান্য কিছু কিটনাশক ব্যবহার করলেও বর্তমানে আদালতের আদেশ মেনে চলা হচ্ছে।’
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুল আলম শাহ বলেন, ‘আদালতের আদেশ মোতাবেক আম বাগানগুলোতে ভোক্তার হাতে নিরাপদ ও মানসম্মত আম তুলে দিতে নিরাপত্তামূলক সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আমবাগানগুলোসহ সব আম বাগানে আমার সদস্যরা কঠোর নজরদারি করছে।’
নওগাঁ কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আম পাড়ার আগে বা তারপর কেউ যাতে ফরমালিন ও কিটনাশক প্রয়োগ করতে না পারে সেদিকে পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। এতে করে আদালতের আদেশ মোতাবেক সবাই উপকৃত হবো। চলতি বছর নওগাঁয় ১৮ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়েছে। তবে অন্যতম আম গোপালভোগ চাষ হয়েছে বেশি। ২৪ মে থেকে নওগাঁর বিখ্যাত সুস্বাদু গোপালভোগ আম নওগাঁসহ দেশের বাজারে আসবে। আমরা আশা রাখি নওগাঁসহ দেশের ভোক্তারা এবার বিষমুক্ত নওগাঁর আমের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।’
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নওগাঁ একটি ঐতিহাসিক জেলা। এই জেলার অনেক ব্র্যান্ডিং উপকরণ রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আম। বর্তমানে নওগাঁ আম উৎপাদনের দিক থেকে দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় নওগাঁয় উৎপাদিত আমকে চাঁপাই ও রাজশাহীর আম বলে বিক্রি করে। এই বিষয় থেকে আমাদের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। মহামান্য আদালতের নির্দেশকে সঠিকভাবে পালন করার লক্ষ্যে আম বাগানে নজরদারির জন্য প্রতিটি উপজেলায় একজন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আশা রাখি এবার দেশের ভোক্তারা বিষমুক্ত ও সুস্বাদু নওগাঁর আম ভোগ করতে পারবেন।’