X
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
২৪ আষাঢ় ১৪৩২

হাতপাখার গ্রাম

আবদুর রউফ পাভেল, নওগাঁ
০৫ জুলাই ২০১৯, ১৮:০৮আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৯, ১৮:৫০

চলছে পাখা তৈরি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি গ্রাম ভালাইন। এটি এখন ‘হাতপাখার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রায় সবাই হাতপাখা তৈরি করেন।  এটি হয়ে উঠেছে তাদের জীবিকার উৎস। তালপাতা দিয়ে তৈরি এ হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।   

মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উত্তরগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত ভালাইন গ্রাম। এ গ্রামে প্রায় ৬৫টি পরিবারের প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ হাতপাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। দরিদ্র এসব পরিবার হাতপাখা তৈরিকেই এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। প্রায় ২৫ বছর যাবৎ এখানকার বাসিন্দারা হাতপাখা তৈরি করে আসছেন।

এই গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ আনজুয়ারা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গরমের সময়, বিশেষ করে, বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্র মাসে হাতপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিবছরএ সময় ঢাকা, সৈয়দপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ফরিদপুর, দিনাজপুর থেকে লোক আসে আমাদের এখানে পাখা কিনতে।’

পাখা তৈরির কারিগর আরশাদ হোসেন বলেন, ‘পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হয়। পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর পরিষ্কার করে পাখার রূপ দেওয়া হয়। এরপর রঙমিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধতে হয়। তবে পাখা তৈরিতে যে খরচ হয়, সেই তুলনায় দাম পাওয়া যায় না।’

কেটে রোদে শুকাতে দেওয়া এই তালপাতা থেকেই তৈরি হবে হাতপাখা অপর কারিগর কোহিনুর বেগম বলেন, ‘এই গ্রামের সবাই বাপ-দাদার পেশা এখনও ধরে রেখেছে। এ পাখা তৈরি করেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।প্রতিদিন আমরা ৬০-৭০টা পাখা তৈরি করতে পারি।’

পাখার কারিগর সাইদুর রহমান বলেন, ‘জেলার সাপাহার, পোরশা উপজেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের আড্ডা ও রোহনপুর থেকে তালপাতা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি তালপাতার দাম পড়ে পাঁচ টাকা। এর সঙ্গে রঙিন বাঁশের কাঠি ও সুতায় খরচ হয় দেড় টাকা। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ পড়ে সাড়ে ছয় টাকা করে। সেখানে আমরা পাইকারি বিক্রি করি প্রতি পিস ১০-১২ টাকা। বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসেন। আবার কখনও নিজেরাই দিয়ে আসি। যে পরিমাণ পরিশ্রম ও খরচ হয় সেই তুলনায় আমরা দাম পাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পাখা তৈরি করি। লাভের একটি অংশ চলে যায় এনজিওতে।  সরকার যদি স্বল্পসুদে আমাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে লাভের পরিমাণ কিছুটা বাড়ত।’

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবারক হোসেন জানান, পাখা তৈরির কারিগররা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে চলেছে। আর্থিক কারণে যেন এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৩ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
টাঙ্গাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৩ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটাই সময়: সিইসি
সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটাই সময়: সিইসি
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
গোলামি থেকে মুক্তি পেয়েছি, আগামীতে আমরা আমাদের রাষ্ট্র বিনির্মাণ করবো: নাহিদ ইসলাম
গোলামি থেকে মুক্তি পেয়েছি, আগামীতে আমরা আমাদের রাষ্ট্র বিনির্মাণ করবো: নাহিদ ইসলাম
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়
আপাতত আন্দোলন নয়, অধ্যাদেশ জারির পর সিদ্ধান্ত
আপাতত আন্দোলন নয়, অধ্যাদেশ জারির পর সিদ্ধান্ত
৩ দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
৩ দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
তিন নেতাকে অব্যাহতি দিলেন জিএম কাদের
তিন নেতাকে অব্যাহতি দিলেন জিএম কাদের
অকার্যকর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেবে মন্ত্রণালয়
অকার্যকর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেবে মন্ত্রণালয়