প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে বৈঠক করেছেন। সোমবার (৭ জুলাই) বিকালে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ৯০ হাজার ৫২৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য সংগৃহীত হয়েছে এবং ৭২ হাজার ৭৭ জনের (৮০ দশমিক ৭৩ শতাংশ) তথ্য যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রক্রিয়াটি চলমান।
বৈঠকে বর্তমান সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ও বাস্তবায়িত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম এবং আগামী ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
এর মধ্যে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ট্রাস্টি বোর্ড এবং নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৩ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন করে গেজেট প্রকাশিত হয়। ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২’ সংশোধন করে গত ৩ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি হয়েছে। গত ২৪ জুন ১১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের মোট ২ হাজার ৮৭৮টি মামলার তথ্য স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে আপলোড করা হয়েছে।
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একই ক্যাটাগরির ২ হাজার ৬৩টি মামলা চিহ্নিত করে এনালগাস ট্রায়ালের জন্য সলিসিটর উইংয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারের বিপক্ষে রায় হওয়া মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আপিলের কার্যক্রম তরান্বিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সংক্রান্ত ১৮টি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৪৫টি সহায়ক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সমুদয় সম্পত্তি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে এবং এই সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য নির্ণয়ের লক্ষ্যে সিএ ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। গেজেটভুক্ত শহীদ ৬ হাজার ৭৬৮ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্য থেকে যাদের পক্ষ থেকে ভাতা গ্রহণ করা হচ্ছে না— এরকম ১ হাজার ৩৯৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের উত্তরাধীকারীদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠতা ও যথার্থতা যাচাই-বাছাইয়ের লক্ষ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। “অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার ৪৫১টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। “মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় দুইটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
এছাড়া আশুগঞ্জে “মুক্তিযুদ্ধকালে মিত্রবাহিনীর শহিদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন)” প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়েছে। “১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মোট ৫০টি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের ১/৬ গজনবি রোডে অবস্থিত ২০ দশমিক ২০ শতক জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে দোকান নির্মাণের জন্য নকশা ও প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে প্রকল্পের অনুমোদিত কার্যক্রম অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত হয়েছে চারটি প্রকল্প। এগুলো হচ্ছে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত), বীরের কণ্ঠে বীরগাথা, খেতাবপ্রাপ্ত বিভিন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ ও জাদুঘর নির্মাণ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প।