এবার রাজশাহী জেলাসহ বিভাগের চার জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছে আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়। আগামী মে মাসের ২৫-২৫ তারিখের মধ্যে জমি থেকে ধান উঠে যাবে।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, এবার চার জেলায় (রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর) বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। মোট তিন লাখ ৫৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। আর এই হিসাব অনুযায়ী ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী অঞ্চলে নওগাঁ জেলায় বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। এই জেলায় এক লাখ ৮২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে, রাজশাহী জেলায় ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর, নাটোর জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই করে ঘরে তোলার জন্য পাঁচ থেকে ছয় জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। অন্তত একদিন লাগে আর কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে এক বিঘা জমিতে এক ঘণ্টা সময় লাগে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে এবার প্রথম ধাপে চার জেলায় বোরো ধান কাটার জন্য ৭০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১০টি রিপার মেশিন (ধান কাটার যন্ত্র) বিতরণ করা হয়েছে। এর আগের মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে ৮৭টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১৫৮টি রিপার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা কেশবপুর এলাকার কৃষক আশফাকুজ্জামান জানান, এবার তিনি ১০ বিঘা বেরোধান আবাদ করেছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শুরু করবে। এবার ধানের শীষ দেখে ভালো লাগছে। তবে শিলাবৃষ্টি কিংবা ঝড় হলে আশানুরূপ ধানের ফলন নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাবে। শুধু আশফাকুজ্জামান নন, তার মতো অনেক কৃষক জানান, এবার ধানের ফলন ভালো হবে।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সুধেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘নাটোর ও নওগাঁ জেলায় অধীনে চলনবিলে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধান কাটা এখনও শুরু হয়নি। কারণ আলু উঠিয়ে বোরো ধান জমিতে আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। তাই কয়েকদিন পর এই জেলায় ধান কাটা শুরু হবে। তাই এক এলাকায় ধান কেটে শ্রমিকরা অন্য এলাকায় ধান কাটতে চলে যান। এছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে নির্মাণ শ্রমিক, ইটভাটার শ্রমিক, ছোট-খাটো দোকানদার, রিকশা-ভ্যান চালকসহ অনেকে অলস সময় পার করছেন। তাই তাদের ধান কাটার জন্য কাজে লাগাতে হবে। তারা এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধান কাটতে গেলে তেমন শ্রমিক সংকট হবে না। সেই সঙ্গে আমাদের দেওয়া ধান কাটার মেশিনগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাই আবহাওয়া ভালো থাকলে ধান কাটতে শ্রমিক সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
ধান কাটার সময় জমিতে অনেক শ্রমিক এক জায়গায় কাজ করবেন। তাই তাদের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে শ্রমিক ও কৃষকদের কোনও ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কি না-এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিবিদ সুধেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘আগে জীবন, পরে কাজ। তাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে কৃষক ও শ্রমিকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে কোনও সমস্যা হলে আমাদের কর্মকর্তারা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করছেন। এমনকি কৃষি অফিস থেকে লিখিত অনুমতি শ্রমিকদের কাছে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের সুরক্ষার বিষয়টিও তাদের জানানো হচ্ছে।’
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ‘জেলার বাইরে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া সব নির্দেশনা পালন সাপেক্ষে অন্য জেলার, উপজেলায় বোরো ধান কাটতে যাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমার যৌথ স্বাক্ষরে প্রত্যয়ন পত্র (অনুমতি) দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কেউ যদি করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন, তাহলে তাদের নমুনা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ শামসুল হক জানান, ‘আমরা বলেছি যতটুকু পারা যায়, মাঠে সামাজিক দূরত্ব মেনে যেন কৃষক ও শ্রমিকরা কাজ করেন। এছাড়া বাসায় ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মাস্ক পরে মাঠে কাজ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’