X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অবহেলায় সাতক্ষীরার গণকবর ও বধ্যভূমি, নেই স্মৃতিসৌধ

মো. আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা
২১ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:০৯আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:১০

satkhira freeofigeter pic 6স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি কোনও স্মৃতিসৌধ। অযত্ন পড়ে থাকা এসব বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণ না করায় চলে গেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে।  তাই বধ্যভূমিগুলোর ইতিহাস নতুন প্রজম্মের কাছে রয়ে গেছে অস্পষ্ট।

এদিকে ছয় বছর আগে সাতক্ষীরা খুলনা রোডের মোড়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু এখনও স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়নি।

সাতক্ষীরা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যেই রয়েছে পাঁচটি গণকবর। জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও পাঁচটি বধ্যভূমি। হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন হিসেবে স্বাধীনতার পর এ সব বধ্যভূমি ও গণকবর থেকে শত শত মানুষের মাথার খুলি, হাড় ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নিজেদের রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সাতক্ষীরার মুক্তিযোদ্ধারা। ১৬ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও সাতক্ষীরা হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয় ৭ই ডিসেম্বর।

গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল খুলনা, বাগেরহাট, ৯৬ গ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৬০০-৭০০ নির্যাতিত মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা আসেন। তারা  বর্তমান সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরদিন সন্ধ্যায় হানাদার বাহিনী স্কুলের পেছনে দীনেশ কর্মকারের বাড়িতে গিয়ে তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। তবে বর্তমানে ওই স্থানে বধ্যভূমির কোনও চিহ্ন নেই।

দীনেশ কর্মকার তার পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। বর্তমানে সরকারি বালক বিদ্যালয়ের পেছনে ছোট একটি ডোবা দেখিয়ে স্থানীয় লোকজন গণকবর ও বধ্যভূমির কথা শুনেছেন বলে জানান। এই পুকুর ও ডোবার অংশটুকু দখলদারদের হাতে চলে গেছে। এখন সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের বাঁকাল ব্রিজ ছিল হানাদার বাহিনীর আরেকটি হত্যাযজ্ঞের স্থান। মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের গুলি করে অথবা জবাই করে ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হতো। এটিও বর্তমানে প্রভাবশালীদের দখলে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়খালী-মাহমুদপুর স্কুলের পেছনের পুকুর থেকে স্বাধীনতার পর উদ্ধার করা হয় কয়েকশ’ মানুষের কঙ্কাল ও মাথার খুলি। সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় বৃহৎ গণকবর ছিল এটি। তবে এখন এর কোনও অস্তিত্ব নেই।

সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গায় স্বাধীনতা লাভের কয়েকদিন আগে ভারতে যাওয়ার পথে গুলি করে হত্যা করা হয় শত শত বাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশু শরণার্থীকে। পরে তাদের গোবিন্দকাটি খালপাড় ও রূপালী ব্যাংকের পেছনে গণকবর দেওয়া হয়। এসব গণকবরের কোনও চিহ্ন এখন নেই। শহরের সুলতানপুর পালপাড়া খালের ধারে হত্যা করা  হতো বাঙালিদের। এখানেই হত্যা করা হয় সুরেন, নরেন ও কেষ্টপদ নামের তিন মুক্তিকামী যুবককে। অন্যদিকে তালার জালালপুর, পাটকেলঘাটার পারকুমিরার বধ্যভূমিগুলোও চলে গেছে দখলে।

সাতক্ষীরার মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজ, জাসদ সভাপতি কাজী রিয়াজ এবং স্থানীয় যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বজনরা অনেকেই দাবি জানান আবিলম্বে সাতক্ষীরার সব গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করতে হবে।

 

/এনএস/এফএস/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথমবারের মতো টেলকো বিমার দাবি নিষ্পত্তি করলো বাংলালিংক ও গার্ডিয়ান
প্রথমবারের মতো টেলকো বিমার দাবি নিষ্পত্তি করলো বাংলালিংক ও গার্ডিয়ান
আফতাবনগরে মীনা বাজারের ৪১তম আউটলেট
আফতাবনগরে মীনা বাজারের ৪১তম আউটলেট
মির্জাপুরে ‘সাপের কামড়ে’ ২ নারীর মৃত্যু
মির্জাপুরে ‘সাপের কামড়ে’ ২ নারীর মৃত্যু
নোয়াখালীতে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
নোয়াখালীতে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
রণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউজরণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
বাবার নির্বাচনি প্রচারণায় নামা মেয়ের গাড়ির ধাক্কায় শিশু নিহত
বাবার নির্বাচনি প্রচারণায় নামা মেয়ের গাড়ির ধাক্কায় শিশু নিহত
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার