শীত এলেই বেশির ভাগ বাঙ্গালী নারী-পুরুষের শীত বস্ত্র হিসেবে পছন্দের তালিকার প্রথম দিকেই থাকে চাদর। নিত্যনতুন ডিজাইন ও দক্ষ কারিগর দ্বারা তৈরি টাঙ্গাইলের চাদর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের নিকট অধিক জনপ্রিয়। কিন্তু শীতের প্রকোপ ও স্থায়িত্ব কম থাকায় টাঙ্গাইলের তাঁতের চাদর বিক্রিতে অনেকটা ভাটা পরেছে।
এই অঞ্চলের তাঁতিরা বিভিন্ন ধরনের চাদর যেমন- মনিপুরি, মালা, নয়নতারা, জ্যাকেট কাপ, মখমল, প্লেন, শালসহ বিভিন্ন ধরনের চাদর উৎপাদন করে থাকেন। ডিজাইন ও কাপড়ের গুনগত মানের ভিত্তিতে প্রতি পিছ চাদর ২২০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মূল্যে পাইকারি বিক্রি করা হয়ে থাকে বলে জানান চাদর উৎপাদনকারীরা।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে শীতের স্থায়ীত্ব কম হওয়ায় চাদরের চাহিদা কমে যাচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বাইরে বাজার সৃষ্টি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার দাবি জানান তারা। এতে করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব হবে। অন্যথায় বেকার হয়ে পড়বে তাঁত মালিক, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী।
শীতের প্রকোপ কম হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর চাদরের চাহিদা অনেক কম। তাই উৎপাদিত চাদরের দামও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গতবছর যে চাদর ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর সেটি মাত্র ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে জানান বাথুলী সাদী গ্রামের তরুন উদ্যোক্তা মো. জাহিদ হাসান।
তিনি জানান, ডিজাইনের বৈচিত্রের উপর ভিত্তি করে প্রতি পিস চাদর ২২০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি করে থাকেন।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১৫০ জন তাঁত মালিকের এক হাজার তাঁত রয়েছে। যেটির মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি চাদর তৈরির জন্য তাঁত শ্রমিকদের চাদর ভেদে ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দেওয়া হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা থেকে বাথুলী সাদীতে কাজ করতে আসা তাঁত শ্রমিক আমিনুল বলেন, সারা বছরই আমরা চাদর উৎপাদন করে থাকি। তবে শীত আসার আগমুহূর্তে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ডিজাইনের বৈচিত্রের উপর ভিত্তি করে প্রতিদিন গড়ে ৬ পিস থেকে ১২ পিছ চাদর তৈরি করা যায়। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৫০০ টাকা রোজগার করতে পারি।
একই গ্রামের মো. খলিলুর রহমান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের এই এলাকায় শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি হত। তখন আমার ২৮টি তাঁত ছিল। কিন্তু এরপর শাড়ি ব্যবসা খারাপ হওয়ায় এবং বিগত বছর গুলিতে চাদরের ব্যবসা ভাল হওয়ায় এই এলাকার লোকজন আস্তে আস্তে চাদর তৈরিতে ঝুকে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, নতুন নতুন অনেক মানুষ এই পেশায় যোগ দেওয়ায় চাদরের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চাদরের নতুন কোনও বাজার তৈরি হয়নি। ফলে গত কয়েক বছরে চাদরের বিক্রি কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই কম দামে চাদর বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে কিছুদিন চললে হয়ত এই এলাকার লোকজন চাদর উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। বেকার হয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষ।
অপর এক চাদর উৎপাদনকারী মো. আলম মিয়া বলেন, আমাদের পুঁজি কম হওয়ার কারণে সারাবছর ধরে যে চাদর তৈরি করি তা শীত আসার আগেই বিক্রি করে ফেলতে হয়। ফলে চাদরের ভাল দাম পাই না। সরকার যদি আমাদের সহজ শর্তে এবং কম সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় এবং বিভিন্ন দেশে বাজার সৃষ্টি করে দেয় তবেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত সকলেই লাভবান হবে।
/আরএ/