X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচন

বয়স্ক আর বিদ্রোহী প্রার্থী, শঙ্কায় আ.লীগ

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০১ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৭আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১৩:১১

কুড়িগ্রামের চিলমারী ও রৌমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। চিলমারীতে ‘অসুস্থ’ ও সত্তরোর্ধ্ব বয়সের প্রার্থীকে মনোনয়ন এবং রৌমারীতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটিকে। দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই রৌমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ এবং ২২ আগস্ট চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার (বীর বিক্রম) মারা যান। পরে ওই দুই উপজেলা পরিষদে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২ নভেম্বর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, চিলমারী উপজেলায় ৫ জন এবং রৌমারী উপজেলায় ৭ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চিলমারী

চিলমারীতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সোলায়মান আলী সরকার (৭৫)। তিনি সদ্যপ্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকারের বড় ভাই এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের শ্বশুর বলে জানা গেছে। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার জন্মতারিখ ১৫ অক্টোবর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস।

চিলমারীতে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসলেও উপনির্বাচনে এবারের দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিয়ে চিন্তিত নেতাকর্মীরা। এই উপজেলায় কোনও বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর বয়স, অসুস্থতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত অবস্থান দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভাবাচ্ছে। আর স্থানীয়রা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী রুকুনুজ্জামানের (আনারস প্রতীক) সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। রুকুনুজ্জামান জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।

নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নেওয়া উপজেলার এক প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে গুঞ্জন আছে, আমাদের প্রার্থীর বয়স অনেক বেশি এবং তিনি অসুস্থ। তিনি ভোটারদের কাছে তেমন যেতে পারেন না। এ অবস্থায় তার বিজয় নিয়ে আমরাও চিন্তায় আছি। যেহেতু দলীয় প্রার্থী, এজন্য আমরা নৌকার ভোট চাইতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। বাকিটা ভোটারদের সিদ্ধান্ত।’ একই মন্তব্য করেন দলটির আরও কয়েকজন কর্মী-সমর্থক।

তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে দলটির উপজেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু বলেন, ‘প্রথম দিকে এমন গুঞ্জন ছিল। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচারণা এবং ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ায় পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়ে এই নেতা বলেন, ‘যেহেতু দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রতীক দিয়েছেন সেহেতু আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান আলী সরকার বলেন, ‘আমি মনে করি না হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাদের (প্রতিদ্বন্দ্বীদের) কোনও দল নেই। নৌকা প্রতীক বড় ব্যবধানে জয় লাভ করবে।’ দলের নেতাকর্মীরা নৌকার বিজয়ের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।

রৌমারী

রৌমারী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী অপর ছয় প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য অব্যাহতি পাওয়া) জাইদুল ইসলাম মিনু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত উপজেলার একাধিক ব্যক্তি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রৌমারীতে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলের তিন জন সক্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কর্মী-সমর্থকরাও তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী (দোয়াত-কলম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমান আলীর (ঘোড়া) অবস্থান অনেকটা ভালো রয়েছে। মূলত দলীয় নেতাদের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে না পারায় এ উপজেলায় নৌকা প্রতীকের পরাজয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজের প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল ইসলাম নিজেই। তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে নৌকার প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটছে। কারণ তারাও নিজেদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তারপরও আমি মনে করি নৌকা বিজয়ী হবে এবং এই উপজেলায় শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

দলের একাধিক নেতার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে একজনকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরেকজনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে জেলায় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।’

অন্যদিকে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর দাবি, তারা জনগণের জন্য কাজ করেছেন। জনগণ তাদের বিজয়ী করবে।

সর্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
নির্বাচনে হারলেও আহত সমর্থকদের দেখতে গেলেন কায়সার 
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন৯০ কেন্দ্রে সূচনার ধারেকাছেও কেউ নেই
ডিএসসিসির উপনির্বাচন: ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা
সর্বশেষ খবর
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে