অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৫ জুলাই) ভোর ৬টায় ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯টায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে গঙ্গাচড়ায় সকাল ৯টায় বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়ায় বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লক্ষীটারী ইউনিয়নের চরইছলী, শংকরদাহ, নোহালী ইউনিয়ের চর বাগডোহরা, মিনারবাজার, দিলিপবাজার, নোহালীর চর, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনকর চর ও আশ্রয়ন প্রকল্পের ৩০০ বাড়িঘরসহ ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আলমবিদিতর ও গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
বাড়িঘরের পাশাপাশি ওই পাঁচটি ইউনিয়নের আবাদী জমির ফসলও তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় শত শত বাড়ির অনেক মালামাল পানির তোড়ে ভেসে গেছে। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় সহস্রাধিক পরিবার নিকটস্থ উঁচু স্থান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে গত দুদিন ধরে তাদের অনাহারে দিন কাটছে। এখন পর্যন্ত বানভাসি পরিবারদের মধ্যে কোনও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি বলে বন্যা কবলিত এলাকার পরিবারগুলোর অভিযোগ।
এ ব্যাপারে লক্ষীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল হাদী জানান, তাদের ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে।
নোহালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের আটটি গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া শত শত হেক্টর জমির আবাদী ফসল তলিয়ে গেছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান, যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থা আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার পানিবন্দি মানুষদের জন্য নয় টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবারের ৮০০ প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।’ শনিবার সকাল পর্যন্ত বরাদ্দ চাল ও শুকনো খাবার দূর্গত এলাকায় পৌঁছেনি বলে বানভাসিদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শনিবার দুপুরের আগেই তারা পেয়ে যাবে।’
অন্যদিকে কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ঢুসমারার চড়সহ চারটি চরাঞ্চলে বানের পানি প্রবেশ করায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া ব্যারেজ, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলা পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি আরও বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।’