বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ বিষয়গুলো একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের চেতনার দ্যুতি একই সুতায় গাঁধা মালা। এর একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটিকে কল্পনা করা যায় না। এগুলোর প্রতিটি স্বাধীন-সার্বভ্রৌম বাংলাদেশের ভিত্তি। আর তরুণ প্রজন্মের মাঝে এই চেতনাকে জাগ্রত রাখতে চেতনার দ্যুতি হয়েই কাজ করছে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’। রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বগৌরবে প্রতিনিয়তই চেতনার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এই কর্নার।
রাজশাহীতে ২০১৮ সালে একযোগে এক হাজার ৯৮০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন করা হয়। এরপর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এই কর্নার গড়ে ওঠে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দৃষ্টিনন্দনভাবে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ গড়ে তোলা হয়েছে। যে কর্নারে মূল্যবান বই, দুর্লভ চিঠিপত্র, বিখ্যাত প্রামাণ্য চিত্র, বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা বই ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা দেশবরেণ্য লেখকদের বই স্থান পেয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দৃষ্টিনন্দনভাবে এই কর্নার সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থী কিংবা সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের চোখ এড়াতে পারে না এই কর্নার। পড়ালেখা জানেন না এমন ব্যক্তিরাও আকুল আগ্রহ নিয়ে কর্নার ভ্রমণ করেন। রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধারাও কর্নারে প্রবেশ করে স্মৃতি আওড়ান। প্রমাণ্য চিত্রে সেই মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল ইতিহাসে ফিরে যায় কৌতুহলী তরুণ প্রজন্মও।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। তিনি রাজশাহীর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসার অপর নাম বঙ্গবন্ধু। সেই ভালোবাসাকে জ্বালিয়ে রাখতে, নতুন প্রজন্মের মাঝে এই চেতনার চর্চায় এই কর্নার খুবই গুরুত্ব ভূমিকা রাখছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। মুক্তিযুদ্ধের পরে একটি গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে প্রচার করেছিল। বাঙালি ভুলতে বসেছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবারও সমুন্নত করেছেন। নতুন প্রজন্ম এই কর্নারের মাধ্যমে সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারছেন। এর চেয়ে ভালোলাগার অনুভূতি কি হতে পারে?’
রাজশাহীর এক হাজার ৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯২৫টি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তোলা হয়। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ও জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনায় বর্তমানে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কৌতুহলী মনে এই কর্নার দারুণভাবে জায়গা করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নগরীর মুন্নুজান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. কুমকুম ইয়াসমিন বলেন, ‘শিশু মন স্বাভাবিকভাবেই খুব কৌতুহলী হয়ে থাকে। শিশুরা যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ছবি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আঙুল উঁচানো একটি আবক্ষ ম্যুরাল, জাতীয় চার নেতার ছবি ও মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবিগুলো দেখে তখন শিক্ষকদের এসে নানা প্রশ্ন করে। ছোট্ট মনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করতে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চর্চার জন্যই এই কর্নার গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীসহ অনেক অভিভাবকও এই কর্নারে এসে বই পড়েন। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানতে ও তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ চমৎকারভাবে কাজ করছে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী জেলা প্রশাসন, আরডিএ ভবন, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী কর ভবন, সরকারি ব্যংকিং প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি দফতরগুলোতে ভিন্ন ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে এই কর্নার। একেকটি দফতর একেকভাবে সমৃদ্ধ করেছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’কে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে ধরে রাখতে, বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে মানুষকে জানাতে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে নগর ভবনে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শুধু নগরভবনই নয়; প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেই এই কর্নার গড়ে উঠেছে। এই কর্নারে যারা আসছেন তারা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন। অনেক মহামূল্যবান বইয়ের সমাহার এই কর্নারে আছে। বই পড়ে ও প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার দারুণ একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।’