কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড় কেটে নতুন গড়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের বসতি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া পাহাড়ি এলাকায় যৌথ অভিযান চালায় ১৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও থানা পুলিশ। এ অভিযানে নেতৃত্বে দেন টেকনাফের এপিবিএন ক্যাম্প ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান।
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় অর্ধশতাধিক বসতি উচ্ছেদ করা হবে উল্লেখ করে এপিবিএন ক্যাম্প ইনচার্জ বলেন, ‘পাহাড়ে খুব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আগত নতুন রোহিঙ্গারা ঘর তৈরি করে বসবাস করছে। বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। তাই ঝুঁকি বিবেচনা করে আমরা এখানে উচ্ছেদ অভিযান করছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের এখান থেকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে।'
তিনি বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি তাদের বসবাসের উপযোগী জায়গা করে দেওয়া হবে। এ অভিযান একদিনে শেষ হবে না। তবে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব বসতি রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’
এ বিষয়ে হ্নীলার ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের এখানে বিশাল পাহাড়ি অঞ্চলে বেশির ভাগ জায়গায় রোহিঙ্গারা বসবাস করে। এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনসহ যৌথ অভিযানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যেহেতু তারা মানবিক কারণে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তারা আশ্রয়হীন মানুষ। বিকল্প কোনও জায়গার ব্যবস্থা করে তাদের স্থানাস্তর করা হবে।’
পাহাড়ি উঁচু জায়গায় বসবাস করেন মিয়ানমারের বলিবাজার গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মো. হারুন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে রাখাইন থেকে প্রাণে বাঁচতে পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছি বাংলাদেশে। অনেক দিন ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে জায়গায় না পেয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখান থেকেও আমাদের সরিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখন যাবো কোথায়?’
এদিকে, এর আগে গত ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড় ও সংরক্ষিত বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এই দুই উপজেলায় বন বিভাগের হিসাবেই প্রায় ৯ হাজার একর পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করেছে। সরকার যেখানে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে চেষ্টা করছে, সেখানে টেকনাফে পাহাড় কেটে নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরির বিষয়টি পরিবেশের জন্য হুমকির পাশাপাশি ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।