টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে সালিশ বৈঠকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তিন গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার শোলাকুড়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েক দফার সংঘর্ষে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংড়া ইউনিয়নের ‘পীরসাব’ বাড়িতে মুলিয়া ও সাকরাইল গ্রামের যুবকদের মাঝে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি মীমাংসা করতে সোমবার দুপুরে মুলিয়া ও সাকরাইল গ্রামের লোকজনদের নিয়ে উপজেলার শোলাকুড়া বাজারে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সহদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদ বিরোধটি সমাধানের দায়িত্ব নেন। সালিশি বৈঠক চলাকালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে সাকরাইল গ্রামের লোকজন তার ওপর হামলা করেন।
একপর্যায়ে সেখানে সাকরাইল ও মুলিয় গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানের ওপর হামলার বিষয়টি তার গ্রাম সহদেবপুরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সহদেবপুর, মুলিয়া ও সাকরাইল গ্রামবাসীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। এ সময় শোলাকুড়া বাজারে হামলা চালিয়ে ১৮-২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং দোকানগুলোতে লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় আহত কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, খবর পেয়ে কালিহাতী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সহদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদের ফোনে কল দিলে তার ছেলে মেহেদী হাসান ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাবা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। সালিশি বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিকল্পিতভাবে সাকরাইল গ্রামের হিটলার, আশিক, আফজালসহ কয়েকজন হামলা চালায়। সালিশে কোনও পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। হামলার ঘটনায় আহত হয়ে আমাদের গ্রামের কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
এ ঘটনায় কতজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের ফোনে কল দিলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তথ্য দিতে রাজি হননি।
কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিন গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’