লক্ষ্মীপুর জেলা শহরে রোজা না রাখায় খাবার হোটেল থেকে বের করে এক বৃদ্ধসহ তিন ব্যক্তিকে রাস্তায় প্রকাশ্যে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন বণিক সমিতির নেতা। থানা এলাকায় করা এক ভিডিও বার্তায় দেখা গেছে, ভুক্তভোগী মুনছুরুল হক ও মো. সাজুকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে লাঠি হাতে নিয়ে ওই নেতা তিন ব্যক্তিকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেছিলেন। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর জেলাসহ দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এরপর ওইদিন রাত ৯টায় জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে সদর থানা এলাকায় এক ভিডিও বার্তায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল আজিজ। আরেক ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া লাল চুল ও দাড়িওয়ালা বৃদ্ধকে ভিডিওতে দেখা যায়নি।
ভিডিও বার্তায় আব্দুল আজিজ বলেন, ‘কয়েকজন মুসলমান ব্যক্তি হিন্দু হোটেলে খাবার খাওয়ার জন্য ঢোকেন। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় তাৎক্ষণিক আমি গিয়ে তাদের বলেছিলাম, আপনারা কেন খাবার খাচ্ছেন? আপনারা তো মুসলমান। সেক্ষেত্রে তারা বলেছে রোজা রাখতে পারিনি। আমি আসলে যে কাজটি করেছি সেটি অন্যায় ও অপরাধ করেছি। এটা ধর্মীয় অনুভূতি, সেজন্য এটা আমার করা ঠিক হয়নি। এজন্য আমি তিন ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইছি। তারা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি এ ধরনের কাজ আর কখনও করবো না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে আর কখনও জড়িত হবো না।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুরে শহরের থানা রোড এলাকায় কয়েকটি পর্দা লাগানো খাবার হোটেলে লাঠি হাতে বণিক সমিতি নেতা আজিজ অভিযান চালিয়েছিলেন। সে সময় রোজা না রাখা কয়েকজন যুবক-বৃদ্ধকে হোটেল থেকে বের করে রাস্তায় প্রকাশ্যে তিনি কানে ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেছেন। এই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা। এ ছাড়া ঘটনাটি নিয়ে জাতীয় ও বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ পরিবেশন করা হয়। পরে রাতেই সদর থানা পুলিশ বণিক সমিতির নেতা আজিজকে আটক করে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী মুনছুরুল হক ও মো. সাজু জানান, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় বণিক সমিতি নেতা তাদের শাস্তি দিয়েছেন। এখন তিনি থানায় ক্ষমা চেয়েছেন। তাই তারা আর কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেবেন না।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বণিক সমিতির নেতা আজিজকে থানায় ডেকে আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে দুই ব্যক্তিকেও আমরা থানায় এনেছিলাম। তারা কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। এ ছাড়া আব্দুল আজিজ নিজেও ক্ষমা চেয়েছেন। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আরেক ভুক্তভোগী লাল চুল-দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকে আমরা খুঁজে পাইনি। শুধু তিনি না, ভুক্তভোগী অন্য কেউ এসেও যদি অভিযোগ দেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’