X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছরেও শেষ হয়নি সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের কাজ

তরিকুল রিয়াজ, বরগুনা
১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৪৩আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১১:২০

সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ আজ ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১০ বছর। ২০০৭ সালের আজকের দিনে সুপার সাইক্লোন সিডরে লণ্ডভণ্ড করে যায় উপকূলবাসীর জীবন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনায় প্রাণ হারায় এক হাজার ৫০১ জন মানুষ। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। গৃহহীন হয় ৮৯ হাজার ৭৮৫টি পরিবার। অথচ ১০ বছরেও শেষ হয়নি সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ। প্রতি অমাবস্যা-পূর্ণিমায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও মাছের ঘেরসহ কৃষকের বসতবাড়ি। স্বাভাবিক জোয়ারেও বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় জলোচ্ছ্বাস আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
সিডরে ক্ষতিগ্রস্তরা বরগুনায় সিডরে আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪৮৪ কিলোমিটার বাঁধ। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪২৯ কি.মি. ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫৫ কি.মি.। মহাসেন, আইলা, রোয়ানুসহ বিভিন্ন দুর্যোগের পর এখন বরগুনায় ৯০০ কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে প্রায় ৮০ কি.মি., সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত দুই কি.মি.। সিডর ও বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এখনও সম্পূর্ণ মেরামত না হওয়ায় আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না কারো।

সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত নারী বরগুনা সদর উপজেলার ৯নং এম বালিয়াতলি ইউনিয়নের ছোট বালিয়াতলি গ্রামের বাসিন্দা রসনারা বেগম বলেন, ‘সিডরের ধ্বংসলীলায় সব হারিয়ে ঠাঁই হয়েছিল খোলা স্থানে। পরে সরকারের দেওয়া ছোট্ট একটা ঘরে মাথা গুঁজেছি। সেই ঘরও আজ  বিলীন হচ্ছে বুড়িশ্বর নদীর ভাঙনে। এবার আর ঘর বাঁধার সামর্থ্য নেই। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া কোনও উপায় নাই।’

বরগুনার মাঝের চর এলাকার আ. রশিদ মিয়া বলেন, ‘সেদিনের কথা মনে পড়লে থমকে যাই। সেদিন গুলিশাখালী গ্রামে অনেক মানুষ মারা যায়। লাশ ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক দূরে। তিন-চার দিন ধরে খুঁজে লাশ পাওয়া যায় অনেক পরিবারের।’

১০ বছরেও শেষ হয়নি সিডরে  ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের কাজ তিনি জানান, সেই সময় ভেঙে যাওয়া বেড়ি বাঁধ এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে এই এলাকার বেড়ি বাঁধের তিন ভাগের দুই অংশ নদীতে চলে গেছে। যে কোনও সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাবে কয়েকটি গ্রাম।

বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু বলেন, ‘সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখনও ঠিক মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অনেক পরিবার থেকে একাধিক লোক মারা গেছে। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে।’

ভাঙা বাঁধ মেরামত না করায় নদী ভাঙন অব্যাহত তিনি জানান, সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কার করলেও আবারও কোনও না কোনও ঝড় এসে তা আগের মতো করে দিয়ে যায়। এ কারণে এখনও সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বেশির ভাগ বেড়ি বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও কাজ করে যাচ্ছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এই জেলা সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনও সব বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয় ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্ব স্ব বিভাগের প্রকৌশলীরা তাদের রির্পোট করবেন। যাতে দ্রুত এ সব কাজ সমাধান হয়। একইসঙ্গে অস্বচ্ছল পরিবারের কর্মক্ষমহীন সদস্যদের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন:

সিডর: ভোলায় স্বজনহারাদের কান্না থামেনি

/বিএল/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড