X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষকের ১০০ টাকার তরমুজ বাজারে ৩০০

আহাদ চৌধুরী তুহিন, ভোলা
২০ এপ্রিল ২০২২, ১১:০০আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৩৬

ভোলার মাটি ও পরিবেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে তরমুজের আবাদ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তরমুজ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। তবে দাম কম পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।

কৃষকদের দাবি, ক্ষেত থেকে ব্যবসায়ী ও পাইকারদের কাছে ১০০ তরমুজ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করেন কৃষকরা। এসব তরমুজের ওজন পাঁচ থেকে আট কেজি। অথচ এসব তরমুজের কেজি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। হিসাবে প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বাগমরা চরে দেখা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ এলাকার মো. জহিরুল হক, মো. ইসমাইল হোসেন, পল্লী চিকিৎসক মো. রাসেল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতারুল ইসলাম স্বপনের কাছ থেকে ২৭ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ২৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাদের।

জহিরুল হক ও ইসমাইল হোসেন জানান, পাঁচ থেকে আট কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তারা। এই হিসাবে তরমুজের পিস পড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দাম কম পাওয়ায় নিজেরাই এখন থেকে ঢাকার মোকামে তরমুজ পাঠানোর চিন্তা করছেন। বড় সাইজের তরমুজের দাম বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু পাইকাররা ছোট-বড় তরমুজের একই দাম দেন তাদের।

ভোলার যুগির ঘোল এলাকার তরমুজ ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘কৃষকের ক্ষেত থেকে পিস হিসেবে তরমুজ কিনি আমরা। কিন্তু তরমুজের ওজন হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করি আমরা। কারণ ছোট-বড় আছে। পিস হিসেবে বিক্রি করতে আমাদের লোকসান হয়।’

ক্ষেত থেকে ব্যবসায়ী ও পাইকারদের কাছে ১০০ তরমুজ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করেন কৃষকরা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ভোলা অফিসের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো ভোলা সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর, ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ভেলুমিয়ার চর ও উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চর কুমারিয়ায় নতুন জাতের বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া আর ক্ষেতে পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। 

ভোলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে চরফ্যাশন উপজেলায়। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ভোলা সদর, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন কৃষকরা।

মাঝের চর এলাকার কৃষক খালেক মুন্সি বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে মাঝের চরে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করি। এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে প্রথমবারের মতো বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করেছি। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক পেয়েছি।’ 

অথচ এসব তরমুজের কেজি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়

তিনি বলেন, ‘এর বাইরে আমার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতে ভালো ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত পাইকারি বাজারে ৫০ হাজার টাকার বারি তরমুজ বিক্রি করেছি। ক্ষেতে এখনও যে ফলন আছে তাতে আশা করছি, আরও ৫০-৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।’

ভোলার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মধ্যস্বত্বভোগী দালাল আর বাজার সিন্ডিকেটের কারণে তরমুজের দাম কম পাচ্ছেন কৃষকরা। ক্ষেত থেকে বাজার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সিন্ডিকেট। কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। খুচরা বাজারে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। 

খুচরা বাজারের তরমুজ বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মানুষ কেজিতে কিনতে চায়, এজন্য কেজিতে বিক্রি করছি। ৬০-৭০ টাকা বিক্রি না করলে আমাদের লাভ হয় না। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ, বাজারের খাজনা এবং চাঁদাসহ বিভিন্ন কারণে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে।’

পাঁচ থেকে আট কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন কৃষকরা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ভোলায় তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৬০০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ২৭ হাজার ১৭০ একর। ভোলায় বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২-সহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি একর জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। প্রতি একর জমিতে গড়ে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে ২০ মেট্রিক টন। কৃষক পিস হিসেবে বিক্রি করলে মূল্য দাঁড়ায় চার লাখ টাকা। এতে প্রায় তিন গুণ লাভ হওয়ার কথা কৃষকের। তবে মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে ভোক্তাকে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে তরমুজ কিনতে হয়। কৃষক কিন্তু পিস হিসেবেই বিক্রি করেন। কোনও কোনও তরমুজের ওজন ১০ থেকে ১২ কেজি হয়। সেক্ষেত্রে একই দাম দেন পাইকাররা।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভোলার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী নাজমুল হাসান বলেন, ‘এ বছর ভোলার মাঝের চর, ভেলুমিয়ার চর ও চর কুমারিয়ার ছয় জন কৃষককে দিয়ে এক একর জমিতে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ চাষ করিয়েছি। কৃষকদের আমরা বীজ, সার, কীটনাশকের পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছি। ক্ষেতে বারি তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন।’

/এএম/
সম্পর্কিত
হিলিতে প্রথমবার কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষ, নতুন সম্ভাবনা
হাত ঘুরলেই বাড়ে দাম, বৃথা ঝরে কৃষকের ঘাম
ভাইরাসের আক্রমণে শুকিয়ে যাচ্ছে ভুট্টা গাছ
সর্বশেষ খবর
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!