ঈদ উৎসব শেষে কর্মস্থলে ফিরতে বরিশাল নৌ-বন্দরে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে ঢাকাগামী ১৩টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ জন্য টিকিট কেটেও বিপাকে পড়েছেন অনেকে যাত্রী। তবে স্পেশাল সার্ভিসে আরও একটি লঞ্চ যুক্ত করা হলে কিছুটা দুর্ভোগ কমে তাদের।
এদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের অপরাধে তিনটি লঞ্চ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈদ উৎসব শেষে কর্মস্থলে ফিরতে মানুষের ঢল নেমেছিল বরিশাল নৌ-বন্দরে। ভিড় সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএ এবং লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে।
নৌ-বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বরিশাল থেকে ঢাকামুখী ১৩টি লঞ্চ দেওয়া হয়। বিকাল থেকে যাত্রীরা লঞ্চগুলোতে ভিড় জমান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে।’
ভ্রাম্যমাণ আদালত বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ঘাট ত্যাগ না করায় তিনটি লঞ্চকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে ঘাট ছাড়তে বাধ্য করা হয়। লঞ্চগুলো হচ্ছে– পারাবাত-৯, পারাবাত-১৮ ও সুরভী-৯। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে ১৩টি লঞ্চ ঘাট ছাড়তে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাধ্য করেন। এতে বহু যাত্রী লঞ্চে উঠতে না পেরে পন্টুনে ভিড় করতে থাকেন। এরপর আরও একটি লঞ্চ যুক্ত করা হয়। আধা ঘণ্টার মধ্যে লঞ্চটি যাত্রীতে পূর্ণ হলে ঘাট ত্যাগ করে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘আজ সকালে আরও তিনটি লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রতিটি লঞ্চেই ভিড় ছিল। শনিবার এর চেয়ে বেশি ভিড় হলে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া লঞ্চের ভেতরে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত না করছে কোনও লঞ্চকে যাত্রী পরিবহনে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’
একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, নির্ধারিত সময়ের আগে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে। আগে-ভাগে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কেবিনের টাকা নিয়ে নেওয়ায় ওই টাকাও আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এখন স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চের ডেকে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এ জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করলেন তারা।
যাত্রী শরীফ মারুফ রেজা জানান, কীর্তনখোলা-২ লঞ্চে তার দুটি ডাবল কেবিন করা ছিল। সেখান থেকে তাকে বলা হয় রাত ৮টার মধ্যে লঞ্চে আসার জন্য। নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা আগে নৌ-বন্দরে গিয়ে তিনি একটি লঞ্চও পাননি। তার দাবি, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তার কেবিনের টিকিটের গায়ে ৮টায় উপস্থিত থাকার কথা লিখে দিয়েছিল। এভাবে বহু যাত্রী আগেভাগে কেবিন নিলেও তারা তাদের কেবিনে উঠতে পারেননি।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিম বলেন, ‘যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়াসহ লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করতে না পারে সেদিকটায় গুরুত্ব সহকারে তদারকি করা হয়। এ কারণে কোনও ধরনের বিপদ ছাড়াই লঞ্চগুলো ঘাট ত্যাগ করতে পেরেছে।’ ঈদের আগে থেকেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানান তিনি।
সুরভী লঞ্চের পরিচালক রেজিন উল কবিরসহ একাধিক মালিক জানিয়েছেন, স্বাভাবিক দিনগুলোতে রাত ৯টার মধ্যে সব লঞ্চ ছেড়ে যায়। এ কারণে কেবিন যাত্রীদের বিকাল ৫টার মধ্যে আসতে টিকিটে লিখে দেওয়া হয়। এরপরও যদি কেউ কেবিনে উঠতে না পারে সে জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় বলে তারা দাবি করেন।