X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

এত বৃষ্টি কখনও দেখেননি বরিশালবাসী

সালেহ টিটু, বরিশাল
২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৪৯আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৪:৫৫

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সারা দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। বৃষ্টিতে পুরো বরিশাল শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি এমনকি বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাজারের মধ্যেও পানি ঢুকে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে দেশের সর্বোচ্চ ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এত বৃষ্টি কখনও দেখেননি বলছেন বরিশাল নগরের বাসিন্দারা।

এদিকে সোমবার রাত ৭টা থেকে আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পানি প্রবেশের ১৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু শহরের সব স্থানে একই পর্যায়ে জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রথমবারের মতো হাঁটুসমান পানিতে ডুবেছে পুরো বরিশাল শহর। এমন কোনও গলি নেই যেখানে পানি ওঠেনি। প্রতিটি বাজার থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে আছে। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বস্তিবাসী।

এত বৃষ্টি কখনও দেখেননি বরিশালবাসী

নগরীর ধান গবেষণা এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, ‌‘জন্মের পর থেকে বরিশাল নগরীতে বসবাস করছি। কিন্তু আমার বুদ্ধি হওয়ার পর এত বৃষ্টি হতে দেখিনি। সকালেও হাঁটুসমান পানি দেখে ঘর থেকে বের হতে পারিনি।’

বটতলা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন সময় নগরীতে পানি উঠলে বাজারে কখনও পানি প্রবেশ করেনি। কিন্তু এ বছর এর ব্যতিক্রম ঘটলো। গতকাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত হাঁটুসমান পানি। প্রতিটি দোকানে ও গুদামে পানি প্রবেশ করে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও পানি সেচে বের করে দিয়ে যতটুকু পেরেছেন মালামাল রক্ষা করেছেন।

করিম কুটির এলাকার বাসিন্দারা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই তাদের প্রধান সড়কটি পানিতে ডুবে থাকে। তবে সেখান থেকে হাঁটা-চলা সম্ভব ছিল। কিন্তু গতকাল রাত থেকে যে পরিমাণ পানি উঠেছে তাতে হাঁটা-চলার কোনও উপায় নেই। ওই এলাকার এমন কোনও বাসা নেই যেখানে নিচতলায় পানি ওঠেনি। কোনও কোনও বাসার বাসিন্দা রাতেই পানি সেচে কোনোরকম ঘুমিয়েছেন। তাদের ধারণা ছিল, সকালে পানি নেমে যাবে। কিন্তু সকাল গড়িয়ে যাওয়ার পরও পানি সরছে না। আর পানি সেচে ফেলার জায়গাও নেই। সব জায়গায় পানি।

কালুশাহ সড়কের বাসিন্দা অপু রয় বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ বছর। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বরিশালে এরকম ‍বৃষ্টি হতে দেখিনি। বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে সেজন্য সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ দায়ী। নগরীর মধ্যে থাকা খালগুলো ড্রেন ও মার্কেটের নিচে চাপা না পড়লে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিদের কাছে জলাবদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছি। যারা ক্ষমতায় আসছেন তারাও নির্বাচিত হওয়ার পর কাজটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কথা বললেও নির্বাচিত হওয়ার পর সব ভুলে যান।’

নগরীর দক্ষিণ আলেকানদা কালু খার বাড়ির বাসিন্দা রানা আলী নেওয়াজ খান বলেন, ‘খাল ভরাটের সাথে সাথে বহু পুকুর ভরাট করা হয়েছে। আর পুকুরগুলো বহুতল ভবনের নিচে চাপা পড়েছে। তাছাড়া খাল ভরাট করে সরু ড্রেন করা হয়েছে। সেই ড্রেন থেকে পানি সরছে না। তার মধ্যে রয়েছে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। একটি ড্রেনের সঙ্গে আরেক ড্রেনের কোনও সংযোগ নেই। ড্রেনের পানি কীভাবে নদীতে পড়বে তার কোনও ব্যবস্থা নেই। যে যার ইচ্ছেমতো শুধু উন্নয়ন করছে।’

নাট্যজন সৈয়দ দুলাল বলেন, ‘এটা অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের ফসল। বড় খাল ভরাট করে নির্মিত হয়েছে মার্কেট ও ড্রেন। এর ফলে আগে যে গতিতে পানি নামতো সেই গতিতে নামতে পারছে না। যতদিন এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ততদিন এভাবে জলাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের নগরবাসীকে বসবাস করতে হবে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, ‘আমার বাসা আমির কুটির এবং অফিস অক্সফোর্ড মিশন রোডে। দুটি জায়গায় অবস্থান নিচতলা হওয়ায় সেখানে পানি ঢুকে পড়েছে। রাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাসার পানি বের করার চেষ্টা করেছি। আজ সকালে অফিসের পানি সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হই।’

এত বৃষ্টি কখনও দেখেননি বরিশালবাসী

তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাজ হলো ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে সচল রাখা। প্রতিটি ড্রেনে মুখ পরিষ্কার থাকলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তাছাড়া খালগুলো সংস্কার করা হলেও পানি দ্রুত নেমে যেতো। কিন্তু ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে এখন পর্যন্ত পানি স্থির রয়েছে। খাল সংস্কারের বরাদ্দ আসলেও সেখানেও সিটি করপোরেশন মামলা করে তা আটকে রেখেছে।’

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাহফুজুর রহমান জানান, সোমবার রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় এত বৃষ্টি বরিশালে কখনও হয়নি।
 
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদের দাবি, কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হওয়ার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও সার্বক্ষণিক ড্রেন পরিষ্কার করে পানির গতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সিটি করপোরেশনের কিছু করার নেই। একদিকে বৃষ্টিপাত, অপরদিকে অমাবশ্যার জো এবং ঘূণিঝড়ের প্রভাবেই এত পানি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে নগরবাসীর জীবন স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

 /এসএইচ/
সম্পর্কিত
তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে
সাগরে লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি 
সর্বশেষ খবর
কোনও কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে না ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ
কোনও কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে না ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ
খুলনায় অসুস্থ নারীর পাশে দাঁড়ালো ‘স্বপ্ন’ কর্মীরা
খুলনায় অসুস্থ নারীর পাশে দাঁড়ালো ‘স্বপ্ন’ কর্মীরা
সরকার ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করবে, মির্জা ফখরুলের প্রত্যাশা
সরকার ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আয়োজন করবে, মির্জা ফখরুলের প্রত্যাশা
দুদকের মামলায় খালাস পেলেন হানিফ পরিবহনের মালিক
দুদকের মামলায় খালাস পেলেন হানিফ পরিবহনের মালিক
সর্বাধিক পঠিত
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে