ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে উত্তাল রয়েছে উপকূলীয় নদ-নদী। এরই মধ্যে বরগুনার বিভিন্ন খেয়াঘাটে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে। ফলে খেয়াডুবির ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব খেয়া নৌকায় পারাপার হচ্ছেন উপকূলীয় এই অঞ্চলের মানুষজন।
খেয়ার যাত্রীরা জানান, এসব খেয়ায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার করা হয়। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে মাঝেমধ্যে খেয়াডুবির ঘটনা ঘটে। এসব খেয়ায় যাত্রীদের জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট ও বয়া নেই।
ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপারের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন বলেন, ‘খেয়াঘাটগুলোতে যাত্রীদের পারাপারে নিরাপত্তার জন্য সরঞ্জাম থাকতে হবে। যদি এগুলো না থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের ইজারাও বাতিল করা হতে পারে।’
জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলা সদরের সঙ্গে বেতাগী উপজেলা ছাড়া জেলার চার উপজেলায় ১৬টি খেয়াঘাট রয়েছে। প্রতি বছর এসব খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার শর্তে বলা আছে, যাত্রীর জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি খেয়ায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বয়া ও লাইফ জ্যাকেট রাখতে হবে।
সরেজমিনে সদরের পুরাকাটা খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে পারাপার করছেন চালকরা। তবে যাত্রী নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট ও বয়া থাকার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি।
ঘাট ইজারাদারা দাবি করেছেন, তাদের এসব নিরাপত্তা সরঞ্জাম অফিসে রক্ষিত আছে। এ ছাড়া একজন লোক দিয়ে এই খোয়া পরিচালনা করা হয়। ফলে নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা সম্ভব হয় না।
খেয়ার যাত্রী মিলন বলেন, ‘এই অঞ্চলের খেয়ায় বয়া ও লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা নেই। যদি থাকে তাহলে যাত্রীদের জন্য ভালো হয়। নির্ভয়ে পারাপার হওয়া যায়।’
খেয়ার আরেক যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন খেয়ায় পারাপার হচ্ছি। নদীতে যখন ঝড় থাকে তখন পারাপারে ভয় লাগে। আমাদের কোনও লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি।’
স্থানীয় এনজিও কর্মকর্তা মাসুদ শিকদার বলেন, ‘আমি যতদিন চলাচল করেছি, কোনও খেয়াই লাইফ জ্যাকেট বা বয়া দেখিনি। প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন বার বরগুনা-পাথরঘাটা আসা যাওয়া করি। খেয়াগুলোতে লাইফ জ্যাকেট থাকলে যাত্রীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারতেন। এসব চাইলে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হন।’
তবে নিরাপত্তা সরঞ্জাম অফিসে রক্ষিত আছে বলে জানালেন বরগুনার পুরাকাটা-আমতলী খেয়াঘাটের ইজারাদার জাকির হোসেন।
নৌযান বড় কিংবা ছোট হোক, যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকা দরকার উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যেসব খেয়ায় যাত্রীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যাতে যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখেন, সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’