X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও অরক্ষিত রসূলপুর বধ্যভূমি

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:০৮আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০:০৮

রসূলপুর বধ্যভূমি কুমিল্লা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে রসূলপুর গ্রাম (একাত্তরে নাম ছিল ফকির হাট)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রসূলপুর গ্রামে রেল লাইনের অদূরে একটি উঁচু ফসলি জমিকে বধ্যভূমিতে পরিণত করে। প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষকে ওই জমিতে খুঁড়তে হয় নিজেদের কবর। এরপর তাদেরকে কবরের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার অনেক বছর পর ২০০৮ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটির সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে।ভেঙে পড়ছে টাইলস। তদারকি না থাকায় দিনে স্থানীয়রা আর রাতে মাদকসেবীরা ব্যবহার করছে স্থানটি। স্মৃতিস্তম্ভে নেই কোনও সাইনবোর্ড, নামফলক, পতাকা উত্তোলনের বেদি।

সরেজমিনে দেখা যায়, রসূলপুর বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের টাইলস ভেঙে পড়ছে। সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে আছে। বধ্যভূমির জায়গা খুবই সংকীর্ণ। নকশা অনুযায়ী স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি। স্মৃতিস্তম্ভে পতাকা উত্তোলনের বেদিও স্থাপন করা হয়নি। স্থানীয়রা সেখানে গরু, ছাগল ও ভেড়া বেঁধে রাখে। খড়-কুটা এমনকি কখনও কখনও ধানও শুকানো হয়। মাদকসেবীরা মাদক সেবন করে। বখাটেদের আড্ডাবাজির স্থান হয়ে উঠেছে বধ্যভূমিটি। 

কৃষক মফিজুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘আমার বাড়ি বধ্যভূমির পাশেই। সংগ্রামের সময় আমি আড়ালে থেকে দেখেছি কিভাবে দলে দলে তরুণ-তরুণীদের এখানে এনে গুলি করে হত্যা করা হতো। গুলি করার আগে তাদের হাতেই কবর খোঁড়া হতো। তাদেরকে পশ্চিমমুখী করে গুলি করে পা দিয়ে লাথি মেরে কবরে ফেলতো। তারপর কোনোভাবে মাটি চাপা দিত। কয়েকদিন পর কুকুর মরাদেহগুলোর হাত-পা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ নিয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতো। সংগ্রাম শেষ হওয়ার অনেক বছর পর এখানে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।  চারদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় নেশাখোররা এখানে নেশা করে। এমনকি মানুষ বিভিন্ন কাজে স্থানটি ব্যবহার করছে।’

রসূলপুর বধ্যভূমি কুমিল্লা সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ছালেক মো. সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রসূলপুর বধ্যভূমির পাশ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় মানুষের হাড়, খুলি, এবং গুলির খোসা চোখে পড়তো। পরবর্তীতে সরকার এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করলেও দিতে পারেনি তার পূর্ণ মর্যাদা।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর যদি এখানে স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করা যেত থাহলে বধ্যভূমির মর্যাদা ও চেতনা সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধারণা পেতো।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কাজী আমান উল্লাহ সর্দার বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে দাবি জানাই সরকার যেন খুব শিগগিরই রসূলপুর বধ্যভূমিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়।বধ্যভূমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ একজন  করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহম্মেদ বাবুল বলেন, ‘রসূলপুর বধ্যভূমির অনেক লম্বা ইতিহাস আছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের বধ্যভূমি হলো রসূলপুর বধ্যভূমি।’ স্মৃতিস্তম্ভে নামফলক বসানো এবং স্থানীয়রা বধ্যভূমিকে যেন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তাকর্মী, নিয়মিত পুলিশ টহলের দাবি জানান তিনি।

/বিএল/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী