X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসন সংকটে অনাথ শিশুদের দুর্ভোগ

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
০৩ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩৮আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩৮

শাক্যমুণি বৌদ্ধবিহার। খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের বুলিপাড়ায় এটির অবস্থান। এই বিহারের পাশেই ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল প্রজ্ঞাবংশ শিশুসদন। উদ্দেশ্য ছিল, পাহাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনাথ শিশুদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নিজ নিজ মাতৃভাষায় ধর্মীয় শিক্ষায় দীক্ষিত করা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৯৪ জন অনাথ শিশু সেখানে বেড়ে উঠছে। আর শিশুদের ধর্মীয় দেশনা ও পাঠদানসহ যাবতীয় দেখভালের জন্য অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষসহ নিয়োজিত রয়েছেন নয় জন ধর্মীয় গুরু।

সবকিছু ঠিকঠাক চললেও আবাসন সংকটে দুর্ভোগের শেষ নেই এখানকার অনাথ শিশুদের। চলমান বর্ষায় ছাদ বেয়ে চুইয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। সীমাহীন কষ্টে কাটছে তাদের রাত। অনাথ এসব শিশুদের খবর রাখে না কেউ।  

শিশুসদনের পরিচালনা কমিটির দফতর সম্পাদক সুইচিংমং মারমা (ইন্দ্রবংশ) বলেন, ‘আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুসদনটির আবাসিক ভবন নির্মাণে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে প্রথম ধাপে পাঁচ লাখ টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে ১০ লাখ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছিল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কথা ছিল, পরবর্তী সময়ে তৃতীয় ধাপের বরাদ্দের মাধ্যমে পুরোপুরি শেষ করা হবে ভবনটির নির্মাণকাজ। তবে গত সাত বছরেও সেই বরাদ্দ আর হয়ে ওঠেনি। তাই এখনও সমাপ্ত হয়নি প্রজ্ঞাবংশ শিশুসদনের আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজ। উপরে ছাদ আর চারপাশে পিলারের স্তম্ভ, ব্যস্ এটুকুতেই থমকে আছে দ্বিতল এই ভবনটি। ইতোমধ্যে ছাদের বিভিন্ন অংশে ফাটলও ধরেছে।’

আবাসন সংকটে অনাথ শিশুদের দুর্ভোগ শিশুসদনের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া সাথোং মারমা ও থোয়াইচিংনু মারমা, দ্বিতীয় শ্রেণির অংকজাই মারমা ও চতুর্থ শ্রেণির রাহুল ত্রিপুরা জানায়, বিহারের বারান্দায় কিংবা খাবার ঘরে গাদাগাদি করে রাত্রিযাপন করতে হয় তাদের।

শিশুসদনের সহকারী পরিচালক উপাধ্যক্ষ অগ্রসার ভিক্ষু বলেন, ‘আবাসিক ভবনটি সম্পন্ন করতে না পারায় শিশুদের রাত্রিযাপনে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। যে ঘরে খায়, সে ঘরেই ঘুমোতে হয় তাদের। জায়গার অভাবে অনেকে আবার বারান্দাতেই ঘুম দেয়। বর্ষা মৌসুমে তাদের কষ্ট বাড়ে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে অনাথ শিশুরা এভাবেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বরাদ্দের জন্য প্রতি বছরই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়, তবে তাতে কোনও লাভ হয় না।’

শিশুসদনটির প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবংশ মহাথের বলেন, ‘২০০৭ সালে টিনের চালার বেড়ার ঘরে শুরু হয় শিশুসদনটির কার্যক্রম। সময়ের ব্যবধানে এটি এখন একটি আলোকিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে কেবলমাত্র আবাসনের অসুবিধার কারণে অনাথ শিশুরা এখানে থাকতে আগ্রহ হারাচ্ছে।’

এছাড়া শিশুসদনটির কাজ সমাপ্তকরণে এবং অনাথ শিশুদের দুর্ভোগ লাঘবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই ধর্মীয় গুরু।

এদিকে, ২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর কাছে কাজ শেষ করার ব্যাপারে আবেদন করা হয়। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, পরবর্তী অর্থবছরে শিশুসদনটির এজন্য বরাদ্দ দেবেন। অথচ তার মেয়াদে কোনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে ২০২১ সালের শুরুর দিকে পরিষদের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। 

মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, ‘শিশুসদনটিতে বরাদ্দ কবে দেওয়া হয়েছিলও তা আমি অবগত নই। আমি দায়িত্বভার গ্রহণের পর কেউ কোনও আবেদনও করেননি। তবে খোঁজখবর নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নের সময় বিষয়টি বিবেচনা করবো।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ