চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান দুটি প্রকল্পের সফলতা নিয়ে সন্দিহান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার দুটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলো মূলত সিডিএ বাস্তবায়ন করছে। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে, এ নিয়ে চিন্তায় আছি। কেননা চট্টগ্রাম নগরীতে ৫৭টি খলের মধ্যে ৩৩টি খাল সিটি করপোরেশনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এই খালগুলোর পুনরুদ্ধার-সংস্কার ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসন কতটুকু সফল হতে পারে তা বুঝতে পারছি না।’
রবিবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পুরাতন নগর ভবনের কে বি আবদুচ সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চসিক ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের সপ্তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন।
সভায় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন খালের উপর যে বাঁধগুলো দেওয়া হয়েছিল সেগুলো এখনও আছে। এগুলো অপসারণের কথা দিয়েও তা করা হয়নি। এ কারণে এবার বর্ষা মৌসুমে নগরীতে জলাবদ্ধতা প্রকট হয়েছে, ফলে নালা-নর্দমা খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার বর্ষা মৌসুম দীর্ঘায়িত ও অতিবর্ষণ হওয়ায় নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি। পোর্ট কানেকটিং রোড ও মাঝির ঘাট স্ট্যান্ড রোড দীর্ঘদিন ধরে যান ও জন-চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা কাজ না করে সটকে পড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব কাজের জন্য নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। এই সড়ক দুটিসহ নগরীর অচল সড়কগুলোকে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসব রাস্তার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা তা করেনি বলেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
সিটি করপোরেশনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত আয়ের উৎস রাজস্ব আদায় খাতকে গুরুত্ব দিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চসিক কখনও সরকারি থোক বরাদ্দের ওপর নির্ভরশীল ছিল না এবং এখনও নেই। তাই রাজস্ব বিভাগকে আরও বেশি গতিশীল হতে হবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় অসামঞ্জস্য বা কর নির্ধারণগত ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পরিসংখ্যানগত জরিপের অভাব রয়েছে তা চিহ্নিত করে হালনাগাদ করতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক আয়ের পরিধি বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে– এ ক্ষেত্রে যেন করদাতাদের প্রতি কোনও অন্যায় চাপ প্রয়োগ করা না হয়।’
পরিচ্ছন্ন বিভাগের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই বিভাগে দক্ষ ও যোগ্য জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আবার বাড়তি ও অপ্রয়োজনীয় জনবলও রয়েছে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক পরিচ্ছন্ন সরঞ্জাম এবং মশকনিধন সংক্রান্ত কার্যকরী ওষুধেরও অভাব রয়েছে। যে ওষুধগুলো ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগকে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা যে প্রতিবেদন পেশ করেছেন সেই ভিত্তিতেই চট্টগ্রাম নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম চলমান থাকবে। নগরীর নালা-নর্দমা-খাল সংস্কারের জন্য দুই হাজার ৫শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আশা করি তা অনুমোদিত হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর, বিভাগীয় ও শাখা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
