X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছরের কাজ চার বছরেও হয়নি, ৩৪টি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিশ্চয়তা

সাইফুল ইসলাম স্বপন, লক্ষ্মীপুর
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১৮আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১৮

১৫৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে লক্ষ্মীপুরে ৩৪টি সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার প্রজেক্টের (এমডিএসপি) আওতায় দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চার বছরে শেষ হয়নি। 

কাগজে-কলমে এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৪৮ শতাংশ। অথচ মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ নির্মাণাধীন ভবনের কাজ হয়েছে ২০-২৫ শতাংশ। কোনোটির কাজ পিলার নির্মাণে থেমে আছে।

এদিকে, শেল্টার কাম বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য জায়গা ছেড়ে পাঠদান নিয়ে সমস্যায় রয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কেউ জানাতে পারছে না কবে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশনকে দোষারোপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়নের গাইয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিল টিনশেডের। ছয় মাসে তিনতলা নতুন ভবন তৈরি হবে- আশ্বাসে টিনশেড ভবনটি ভেঙে জায়গা খালি করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। পিলার উঠানোর পর এখন কাজ বন্ধ। এর মধ্যে চার বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খুলে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ চন্দ্র দাস বলেন, ঠিকাদার মালামাল না সরানোর কারণে ঝুঁকিতে রয়েছি। ভবন নির্মাণের কাজে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা নেই। উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও কাজ হয়নি।

কাগজে-কলমে এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৪৮ শতাংশ

নির্মাণাধীন ভবনের তথ্য বোর্ড থেকে জানা যায়, পাঁচ কোটি ১৯ লাখ টাকায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে গাইয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে নাভানা কনস্ট্রাকশন। ২৪ মাসের মধ্যে ভবন হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু চার বছরে পিলার ছাড়া কিছুই হয়নি। কবে নির্মাণকাজ শেষ হবে তা জানে না কেউ। প্রকল্পের ২৮ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে তথ্য বোর্ডে দেখানো হয়েছে। 

একই প্রকল্পের অধীনে শুরু হয়েছিল কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চর পাগলা পাটোয়ারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ। তিন তলা ভবনের বিদ্যালয়ের প্রথম ছাদ ঢালাইয়ের জন্য রডের যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তা গত ২৭ মাস ধরে বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকাচ্ছে। ছাদে গাঁথা সবগুলো রডে মরিচা ধরেছে। প্রথম ছাদ থেকে দ্বিতীয় ছাদের পিলারের জন্য তোলা রডগুলোতে ধরেছে মরিচা। হাত লাগলেই মরিচা ভেঙে পড়ছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল উল্লাহ বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ না করেই বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে। ভবনটি নির্মাণকালীন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য যে অস্থায়ী টিনশেড ঘর তৈরি করা হয়েছিল, তাও ভেঙে গেছে। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীরা বসার জায়গা পাচ্ছে না।

চার কোটি ২৩ লাখ টাকায় ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল ভবনের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন। এরই মধ্যে চার বছর পার হয়েছে। এখনও একটি ছাদও নির্মাণ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ প্রকল্পের ২৩ নম্বর সিরিয়ালে ভবনের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে তথ্য বোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কার্যালয় ও প্রকল্পের প্রসপেকটাস থেকে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এমডিএসপির আওতায় জেলায় ৩৪টি সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয় ভবন এবং ২০.৪৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ২২টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় নাভানা কনস্ট্রাকশন। ১৫৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মাসের মধ্যে হস্তান্তর করবে বলে চুক্তি হয়। কাজ তদারকির জন্য এলজিইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় সাত, রামগতিতে ১০, কমলনগরে ছয়, রায়পুরে আট এবং রামগঞ্জ উপজেলায় তিনটি সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয় ভবন ও সংযোগ সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের কথা। কিন্তু চার বছর পরও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কবে কাজ শেষ হবে তাও বলছেন না ঠিকাদার।

বাস্তবে বেশিরভাগ নির্মাণাধীন ভবনের কাজ হয়েছে ২০-২৫ শতাংশ

এখনও অধিকাংশ ভবনের পিলার এবং একতলায় নির্মাণকাজ সীমাবদ্ধ। সদরের দক্ষিণ-পূর্ব ভবানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য শাকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ আংশিক হয়েছে। বাকি ৩১টি বিদ্যালয় ভবনের কাজ, একতলার বিম, ছাদ ও পিলারে সীমাবদ্ধ। 

তবে জেলা এলজিইডি অফিসের তথ্য বোর্ডে, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ২৮-৬০ শতাংশ এবং গড়ে ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। বাকি কাজ কবে শেষ হবে তা জানেন না এলজিইডির কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাভানা কনস্ট্রাকশনের এক প্রকৌশলী বলেন, কাজের শুরু থেকেই রড, সিমেন্ট, বালু ও পাথরের টানাটানি ছিল। এত সংকটে বড় প্রকল্পের কাজ করা যায় না। এসব কারণে প্রকল্পের কাজ ছেড়েছেন অনেক প্রকৌশলী। যারা রয়েছেন তাদের অনেকের বেতন ৩-৪ মাস বন্ধ। কি কারণে কাজে গাফিলতি তাও বলতে পারছি না। প্রকল্পের শুরুতে ৩৪টি ভবনের জন্য প্রায় ৩০০ জনবল ছিল। বর্তমানে রয়েছে ১০০  জনের মতো। তবে বেশিরভাগেরই বেতন নেই।

এ বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে প্রকল্পের ম্যানেজার প্রকৌশলী এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে রাজি নই।

জানতে চাইলে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম পাটোয়ারী বলেন, নাভানার সঙ্গে প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গত এপ্রিল মাসে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কাজের এমন বাজে অবস্থা কোথাও দেখিনি। বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের মাধ্যমে কাজের টেন্ডার হয়নি। সে জন্য আমরা পুরোপুরি তদারকি করতে পারি না। নাভানা কনস্ট্রাকশন আমাদের কোনও তথ্য দিচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২০২৪ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল দেখলো বিশ্ব
২০২৪ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল দেখলো বিশ্ব
বকেয়া বিল ৫ কোটি টাকা, কেটে দেওয়া হলো পৌর ভবনের বিদ্যুৎসংযোগ
বকেয়া বিল ৫ কোটি টাকা, কেটে দেওয়া হলো পৌর ভবনের বিদ্যুৎসংযোগ
নগদ মেগা ক্যাম্পেইনের উপহার পেলেন ২১ বিজয়ী
নগদ মেগা ক্যাম্পেইনের উপহার পেলেন ২১ বিজয়ী
৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়ক, বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ
এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণ৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়ক, বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা