X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

দিনে ৬০ মণ মুড়ি উৎপাদন করছে ৪০ পরিবার

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
০২ এপ্রিল ২০২২, ২১:৩০আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ২১:৪৯

সারি সারি মাটির চুলা। চুলার ওপর বসানো বড় বড় মাটির পাত্র। একজন চুলায় কাঠ-খড় দিয়ে আগুন দিচ্ছেন। আরেকজন আগে প্রস্তুত করা চাল এনে গরম পাত্রে ঢেলে দিচ্ছেন। পাশের অন্যজন নেড়ে দিচ্ছেন সেই চাল। মিনিট পাঁচেক নাড়ার পর সেই চাল ঢেলে দেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুলায় থাকা পাত্রে। যে পাত্রে রাখা ছিল গরম বালু। মুহূর্তেই সেই চাল থেকে হয়ে যাচ্ছে মুড়ি। এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয় মধ্য রাতের পর। চলে দুপুর পর্যন্ত।

রমজানের মুড়ির চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে কুমিল্লার বরুড়ার মুড়ি তৈরির গ্রামে এভাবেই চলছে ব্যস্ততা। গ্রামে ঢুকতেই নাকে আসবে মুড়ির ঘ্রাণ। কানে আসবে মুড়ি ভাজার শব্দ। শনিবার (২ এপ্রিল) সরেজমিনে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের উঠানে উঠানে বিছিয়ে রাখা হয়েছে ত্রিপল। বাড়ির লোকজন সেই ত্রিপলে এনে ঢালছেন গরম গরম মুড়ি। কয়েকজন আবার তা বড় বড় বস্তায় ঢোকাচ্ছেন পাইকারদের জন্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪০ বছর আগে এই গ্রামে হাতে ভাজা মুড়ির প্রচলন হয়। কালক্রমে পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রেখেছেন গ্রামের কয়েকটি পরিবার। বর্তমানে আশপাশের কোনও এলাকায় হাতে মুড়ি ভাজার প্রচলন নেই। তাই এই গ্রামের আরেক নাম মুড়ির গ্রাম। রমজান এলেই এই গ্রামে মুড়ি ভাজার ধুম পড়ে। গ্রামের প্রত্যেক চুলায় গভীর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত জ্বলে আগুন।

বর্তমানে হাতে ভাজা মুড়ির সবচেয়ে বেশি জোগান দেন ওই গ্রামের দূর্গা চরণ পাল। তিনি বলেন, ‘গ্রামের ৪০ পরিবার এখনও হাতে মুড়ি ভাজেন। এই ৪০ পরিবারে তিন জন করে প্রায় ১২০ জন নারী কর্মচারী কাজ করেন।’

তিনি জানান, ৪০ পরিবার মিলে দিনে প্রায় ৬০ মণ মুড়ি উৎপাদন করেন। যা কুমিল্লার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও রাজধানী ঢাকাতেও পাঠানো হয়। করোনার কারণে গত দুই রোজায় তেমন ব্যবসা হয়নি। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর মুড়ির চাহিদা বেড়েছে। রমজানকে সামনে রেখে প্রতিদিন ২০ মণ মুড়ি বেশি উৎপাদন করছেন তারা।

গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী হরি চরণ পাল জানান, গিগজ ও টাপি এই দুই রকমের চাল দিয়ে মুড়ি ভাজা হয়। জেলার লাকসামের বিজরা বাজার ও লালমাই উপজেলার বিজয়পুর বাজার থেকে এই দুই ধরনের চাল কিনে আনা হয়। চালের দাম কম বলে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাতে ভাজা মুড়ির দাম কমেছে। 

তিনি বলেন, ‘আমরা পাইকারদের কাছে ৫০ কেজির এক বস্তা বিক্রি করি প্রায় চার হাজার টাকায়। তারা এসে ট্রাক বা পিকআপভ্যানে করে মুড়ি নিয়ে যায়।’

প্রায় ১৫ বছর ধরে এই মুড়ির গ্রামের একটি পরিবারে কাজ করেন একই গ্রামের বেপারী বাড়ির আনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, রাত ২টায় তারা ভাজা শুরু করেন। দিনের ১২টা পর্যন্ত চলে এই কাজ। এরপর যান ঘুমাতে। তবে রমজান এলে কাজের চাপ ও সময় বেড়ে যায়।

আরেক কর্মচারী আছিয়া বিবি জানান, দৈনিক জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুপুরের খাবার মালিকের বাড়িতেই খাওয়ানো হয়।

কুমিল্লার চকবাজারের মুড়ি ব্যবসায়ী জাকির স্টোরের মালিক মো. জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে মুড়ি আনি। আমার কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা আছে, হাতে ভাজা মুড়ি কেনার। এ ছাড়া এখনও মেশিনে তৈরি মুড়ির তুলনায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা ভালো।’

লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন হাতে ভাজা মুড়ি তেমন পাওয়া যায় না। তবে তাদের বাবা-দাদারাও এই কাজ করতেন। তারাও এই পেশায় নিয়োজিত আছে। একদম বিশুদ্ধ হাতে ভাজা মুড়ি তারা উৎপাদন করে। আমি অবশ্যই তাদের এই কাজ অব্যাহত রাখতে যা যা করা যায় করবো।’

/এফআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
ফেয়ার প্লে কাপ টি-২০: আইএসইউকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ইউল্যাব
ফেয়ার প্লে কাপ টি-২০: আইএসইউকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ইউল্যাব
নারীর স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
নারীর স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
রামপুরায় রিকশাচালকের রহস্যজনক মৃত্যু
রামপুরায় রিকশাচালকের রহস্যজনক মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে