দুষ্কৃতিকারীদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম। শুক্রবার (৬ মে) সন্ধ্যায় নির্বাচনি এলাকার সোনাইমুড়ী উপজেলার দেউটি ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যের ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিকাল সাড়ে ৫টায় ওই মাঠে দেউটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম।
সেখানে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের যেখানেই পাবেন গণপিটুনি দিয়ে জায়গায় মেরে ফেলবেন, আমি হুকুম দিয়ে দিচ্ছি এসব দুষ্কৃতকারীদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেললে, কিছুই হবে না। যদি কেউ মামলা করে আমি মামলার ১নং আসামি হবো, আপনারা কি আমার কথা বুঝতে পারছেন? যদি পুলিশ না পারে, আমি আপনাদেরকে বলে গেলাম যে, যেসব দুষ্কৃতকারীরা সমাজের মানুষের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে, যারা সমাজের মানুষকে অত্যাচার করছে আপনারা তাদের পিটিয়ে মেরে ফেলবেন তাতে কিছুই হবে না। আমি আসামি হবো, সে ঘোষণা দিয়ে গেলাম।’
একাধিক সূত্র বলছে, এমপি প্রতিপক্ষের লোকজনকে উদ্দেশ করে এবং দলীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিতে গিয়ে এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। ওনার এমন বক্তব্যে উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সোনাইমুড়ী থানার ওসি হারুন উর রশিদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন শাকিল, আওয়ামী লীগ নেতা কিং মোজাম্মেল, আবুল খায়ের, জামাল উদ্দিন, ইউপি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বেলাল পাটোয়ারী প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে বেঁচে থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিতো সাহা নামের এক যুবক। মৃত্যুর পর ওনার পরিবারের সদস্যদেরও হুমকি দিচ্ছে একই যুবক। এই বিষয়ে একাধিকবার পুলিশকে জানানো হলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। সভাস্থলে এমপি উপস্থিত হওয়ার পর বিষয়টি জানান স্থানীয় লোকজন। পরে এমপি বিষয়টি ওসিকে জানান। স্থানীয়দের এসব অভিযোগ ও পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার সূত্র ধরে দুষ্কৃতিকারীদের গণপিটুনি দেওয়ার কথা বলেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবুল বাবু বলেন, ‘ওনার পুরো বক্তব্য কেটে খণ্ডিত অংশ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগে এবং পরের পুরো বক্তব্য শুনতে হবে। উনি বলেছেন, যারা সন্ত্রাস, ইয়াবা, মদ, জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে। প্রশাসনকে কঠিন হুঁশিয়ারি প্রদান করেন।’
সোনাইমুড়ী থানার ওসি হারুন উর রশিদ দাবি করেন, ‘উনি যেহেতু সংসদ সদস্য, ওনার নিরাপত্তায় আমাদের কাজ করতে হয়। স্টেজের বাইরে আমি ডিউটিতে ছিলাম। উনি বক্তব্যে কী বলেছেন, আমি ঠিক শুনতে পাইনি।’
এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।