চট্টগ্রামে গত কয়েক বছরে মাদক গ্রহণ, বহন এবং ব্যবসায় জড়িত অভিযোগে অনেক নারী গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে কারাগারে রয়েছেন। অথচ তাদের চিকিৎসায় বিভাগীয় শহরে নেই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। এ কারণে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঝুঁকছেন মাদকাসক্ত নারীরা।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই নারী। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়লেও তাদের চিকিৎসার জন্য নেই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে সরকারি একটি ও বেসরকারি ১৭টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। সবগুলোই পুরুষদের চিকিৎসার জন্য। এসব কেন্দ্রে নারীদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। এ কারণে মাদকাসক্ত নারীরা দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঝুঁকছেন। তবে লোকলজ্জা ও সামাজিকতার ভয়ে নারীদের মাদকাসক্তির বিষয়টি পরিবার থেকেও লুকিয়ে রাখা হয়। এমনটাই জানিয়েছেন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম কারাগার সূত্র জানায়, বর্তমানে কারাগারে ২৬৭ জন নারী রয়েছেন। এর মধ্যে ১১০ জনই মাদক মামলার আসামি। নারী মাদক ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত। এ পর্যন্ত কাউকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রামে বেসরকারি ১৭টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। এগুলো হলো- আর্ক, দীপ, প্রশান্তি, অংকুর, দীপ্তি, দৃষ্টি, সেভার আলোর পথ, আলো, এলার্ট, শুকতারা, আভা, স্রোত, গ্রিন, পরশ, হেল্প, ভোর ও ড্রিম। এর মধ্যে তরী, অর্ক ও অংকুর নিরাময় কেন্দ্রে ২০টি করে বেড রয়েছে। বাকিগুলোতে বেড আছে ১০টি করে। তবে অব্যবস্থাপনার কারণে নীল এবং নয়ন নামে দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
এছাড়া চট্টগ্রামে ২৫ বেডের সরকারি একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এটির দেখভাল করে। এই নিরাময় কেন্দ্রের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. অঞ্জন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৫ বেডের এ নিরাময় কেন্দ্রে বর্তমানে ২১ জন রোগী ভর্তি আছেন। তবে নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য এখানে কোনও বেড নেই। আমাদের আউটডোর চিকিৎসাসেবা চালু আছে। এখানে বিভিন্ন সময় নারী রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে মাদকাসক্ত নারীদের জন্য আলাদা চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রয়োজন। কেননা চিকিৎসা পেলে তারাও সঠিক পথে ফিরতে পারবেন। সেইসঙ্গে মাদক ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরবেন।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যাকি চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীতে যেসব নারী মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের অধিকাংশই মাদক সেবন করেন। অভিযানে মাদকসহ গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নারী। তবে চট্টগ্রামে মাদকাসক্ত নারীদের চিকিৎসায় কোনও নিরাময় কেন্দ্র নেই। বেসরকারিভাবে নারীদের নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় এর সঙ্গে জড়িতদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি আমরা। এ বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হচ্ছে আমাদের। তবে এখনও কেউ এগিয়ে আসেনি।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে মাদকাসক্ত নারীদের চিকিৎসায় নেই নিরাময় কেন্দ্র। এ কারণে যারা চিকিৎসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাদেরকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিই। তবে বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি মাদক সেবনে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি বিত্তশালী পরিবারের নারীরাও মাদকে জড়িয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা দিয়ে তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
মাদকাসক্তদের সংখ্যা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নানা কারণে মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েন নারীরা। একেকজন একেক কারণে মাদক সেবনে জড়ান। তবে অধিকাংশ ঘটনা হতাশার কারণে ঘটছে। সামাজিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অধিকাংশ নারী মাদকাসক্তই পাচ্ছেন না যথাযথ চিকিৎসা। একসময় পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তারা। মাদকাসক্ত নারীদের মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। তবে বর্তমানে কত নারী চট্টগ্রামে মাদকাসক্ত এর সঠিক তালিকা আমাদের কাছে নেই।’