X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসানচরে ভালো আছেন রোহিঙ্গারা, ফিরতে চান নিজ দেশে

রনজিত চন্দ্র কুরী, নোয়াখালী
২৫ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৪আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৮:০৪

কক্সবাজারে ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে ভালো আছেন রোহিঙ্গারা। সেখানে সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে নিরাপদ পরিবেশ ও নাগরিকত্ব পেলে মিয়ানমারে ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারা। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার দাবি তাদের। 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে দলবেঁধে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছিল রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্মম নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। ওই সময় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। অবশ্য এর আগে সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ ধাপে ৩০ হাজার ২০০ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা

ভাসানচর শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। সে লক্ষ্যে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার একর আয়তনের ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী করে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়। বর্তমানে সেখানে রোহিঙ্গারা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুটি সহজ নয়, তাড়াতাড়ি সমাধান হবে না: ব্রিটিশ হাইকমিশনার

ভাসানচরের ২৫ নম্বর ক্লাস্টারের মাঝি মো. কামাল বলেন, ‌‘আমার ক্লাস্টারে ৫২৫ রোহিঙ্গা বসবাস করেন। আমিসহ আমার পরিবারের সদস্য ৯ জন। আমার চাচা, ফুফু ও বড়ভাই থাকেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এর মধ্যে একবার উখিয়া ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেছি। বর্তমানে ভাসানচরে থাকা-খাওয়া ও চলাফেরায় কোনও সমস্যা নেই। সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য যা দরকার সবকিছু পাচ্ছি আমরা। তারপরও নিজের জন্মস্থানের জন্য মায়া লাগে। মিয়ানমারে চলে যেতে যাই আমরা। সেখানে থাকতে পারলে ভালো লাগতো। নিজ দেশে আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলেমিশে বসবাস করতে চাই আমরা।’

নিরাপদ পরিবেশ ও নাগরিকত্ব পেলে মিয়ানমারে ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারা

২৬ নম্বর ক্লাস্টারের মাঝি মো. হামিদ বলেন, ‘আমার ক্লাস্টারে ৫৪৪ জন রোহিঙ্গা থাকেন। আমার পরিবারের সদস্য সাত জন। মিয়ানমারে আমার পরিবারের ৪৫ জন সদস্য ছিল। এর মধ্যে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বাকি ২২ জন নিয়ে কোনও রকমে বেঁচে উখিয়ায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমার বড় মেয়েকে কুতুপালং ক্যাম্পে বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলেও বিয়ে করিয়েছি। ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আমার পরিবার এখানে ভালোভাবে জীবনযাপন করছে। ভাসানচরে সন্ত্রাসী নেই। নিরাপদ জীবনযাপন করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‌‘এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ভালো। খাওয়া-দাওয়া এবং চলাফেরায় কোনও সমস্যা নেই। তারপরও আমরা দেশে ফিরতে চাই। নিজ দেশে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারলে খুব ভালো লাগতো।’

আরও পড়ুন: বিচার ও প্রত্যাবাসন দাবিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানববন্ধন-সমাবেশ

ভাসানচর প্রকল্পের উপ-পরিচালক কমান্ডার আনোয়ারুল কবির বলেন, ‌‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে এক হাজার ৬৪২, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে এক হাজার ৮০৪, ২০২১ সালের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে তিন হাজার ২৪২, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে তিন হাজার ১৮, ৩ ও ৪ মার্চ পঞ্চম ধাপে চার হাজার ২১, ১ ও ২ এপ্রিল ৬ষ্ঠ ধাপে চার হাজার ৩৭২, ২৫ নভেম্বর সপ্তম ধাপে ৩৭৯, ১৮ ডিসেম্বর অষ্টম ধাপে ৫৫২, ৬ জানুয়ারি নবম ধাপে ৭০৫, ৩১ জানুয়ারি দশম ধাপে এক হাজার ২৮৭ এবং একাদশ ধাপে এক হাজার ৬৫৫ জনসহ ১৬ ধাপে ৩০ হাজার ২০০ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের মে মাসে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নেওয়া হয়।’

রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী করে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়

আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘ভাসানচরে বসবাসের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। এখানে কোনও ধরনের মাদক কেনাবেচা না থাকায় মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা যুবকরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে।’

গত ৪ আগস্ট ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে বসবাসের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য থাকা-খাওয়া, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আমরা চাচ্ছি রোহিঙ্গারা কক্সবাজার থেকে ধীরে ধীরে ভাসানচরে আসুক। এখানে তাদের খাবার সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। এর বাইরে যাবতীয় সবকিছু দিচ্ছি আমরা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন পালিয়ে যেতে না পারে এবং কোনও দালালের খপ্পরে না পড়ে সেজন্য কাজ করছে কোস্টগার্ড। এছাড়া তারা যেন কোনও ট্র্যাপে না পড়ে, ভুল তথ্য দিয়ে যেন মানবপাচারকারীরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে না পারে, তার দেখাশোনা করছে কোস্টগার্ড। ড্রোন দিয়ে সবকিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা যেন নির্ভয়ে এখানে বসবাস করে এবং শিগগিরই মিয়ানমারে চলে যেতে পারে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি, মিয়ানমারে ফেরত যাবেন ২৮৮ জন
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বশেষ খবর
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!