X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

চার রোগে কাবু চট্টগ্রামের মানুষ

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০৩ অক্টোবর ২০২২, ২০:০০আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ২০:০০

চার ধরনের রোগে কাবু চট্টগ্রামের মানুষ। এর মধ্যে প্রথমে রয়েছে চোখ ওঠা, ডেঙ্গু, ডায়রিয়া-কলেরা ও করোনাভাইরাস। এর মধ্যে কোনও না কোনও রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলার বাসিন্দারা। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনসহ নানা কারণে এসব রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

চোখ ওঠা কোন ধরনের রোগ?

চোখ ওঠা একটি স্পর্শকাতর রোগ। চোখ ওঠাকে কনজাংটিভাইটিস বা রেড অথবা পিংক আই বলে। অর্থাৎ কনজাংটিভা নামক চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। চোখ ওঠার মূল কারণ ভাইরাসজনিত এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। তবে আক্রান্ত কারও চোখের দিকে তাকালে কারও চোখ ওঠে না। ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই চোখ ওঠে। আক্রান্ত চোখ কিছুদিন পর ভালো হয়ে যায় ঠিক, কিন্তু আশপাশে অনেককেই আক্রান্ত করে বা করতে পারে। আক্রান্ত কেউ তিন দিনে ভালো হয়ে যায়, কারও আবার ১৫-২০ দিনও লাগে। তা নির্ভর করে কার চোখ কী ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার ওপর।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়েছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা

চট্টগ্রামে এখন ঘরে ঘরে চোখ ওঠা রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগে আক্রান্তদের কেউ কেউ সাত দিন থেকে ২০ দিন পর্যন্ত এ সমস্যায় ভুগছেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ভিড় করছেন রোগীরা। শুধুমাত্র চমেকের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী আসছেন।

নগরীর মুরাদপুর সঙ্গীত এলাকার বাসিন্দা মুনতাসির উদ্দিন রাফি বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে আমার পরিবারের চার সদস্য চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে চোখে অত্যন্ত জ্বালাপোড়া করছে। শুধু আমার পরিবারের নয়, আমি যে বাসায় তার অনেকে এই রোগে ভুগছেন।’ 

চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়েছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা

যা বলছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মে চোখ ওঠা রোগ দেখা দিলেও এবার শরতে বেড়েছে প্রকোপ। চোখ ওঠা রোগ ছোঁয়াচে। তবে কারও চোখের দিকে থাকালে এ রোগ ছড়ায় না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যবহারে রোগ ছড়াতে পারে। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালোভাবে তৈরি হয়নি, তারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চোখ ওঠার লক্ষণগুলো হলো—চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা, চুলকায় বা অস্বস্তি। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, এরপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। তখন চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে, চোখের নিচের অংশ ফুলে যায়, জ্বলে এবং চুলকায়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট চিকিৎসক মোহাম্মদ উল হক মেজবাহ বলেন, ‘চোখ ওঠা রোগী দিন দিন বাড়ছে। তবে এই রোগে ভয়ের কারণ নেই। আক্রান্ত চোখে বারবার পানি দিতে হবে। ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি চোখের চিকিৎসক দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে হবে। কেননা রোগের ধরন দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চোখ ওঠা ব্যক্তিকে আলাদা কক্ষে থাকতে হবে। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হয় পরিবারের অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে।’

ডেঙ্গু

চট্টগ্রামে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বেড়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার। প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচ জন। শুধু সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলার কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, ‘চট্টগ্রামে রবিবার ২৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের দিন শনিবার ২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজকের তথ্য এখনও আমাদের হাতে আসেনি।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যপক চিকিৎসক মো. মামুনুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে এই হাসপাতালে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। প্রতিদিন সাত-আট জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো—এখন যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন তাদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল। আগে ভর্তি হওয়া রোগীদের রক্তক্ষরণ হয়নি। গত এক সপ্তাহ ধরে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাদের অনেকের দাঁতের মাড়ি ও চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেক রোগীর প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। একইভাবে অনেক রোগীর রক্তচাপ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এসব রোগীকে বেশিদিন চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। জ্বর কমার পরও তিন দিন রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হচ্ছে। তারপর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক নুরুল হক বাংলা ট্রিব্রিউনকে বলেন, ‘এই হাসপাতালে বর্তমানে ৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। প্রতিদিন সাত-আট জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।’

ডায়রিয়া-কলেরা

চট্টগ্রামে প্রতিদিন ১২০-১৫০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়ায়। এর মধ্যে ১৫-২০ শতাংশের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। 

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিদিন ৮০-৯০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলার ১৫টি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে বর্তমানে ৪০ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। একইভাবে চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আট এবং বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২২ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। 

চট্টগ্রামে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার বেড়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার

বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডায়রিয়া রোগীর ১৫-২০ শতাংশের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’   

করোনাভাইরাস

চট্টগ্রামে প্রতিদিন ২০-২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সচেতনতার পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় চলার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। 

তিনি বলেন, ‘সোমবার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর ১২ এবং উপজেলার বাসিন্দা সাত জন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত এক লাখ ২৯ হাজার ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরীতে ৯৪ হাজার ৫১ জন এবং উপজেলায় ৩৪ হাজার ৯৬৪ জন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন এক হাজার ৩৬৭ জন। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৭৩৭ এবং উপজেলার ৬৩০ জন।

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‌‘চার ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলার বাসিন্দারা। প্রত্যেক পরিবারের কেউ না কেউ এসবের কোনও একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য জনসচেতনতার বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘ধুলাবালু, অতি গরম এবং এলার্জিজনিত কারণে চোখ ওঠা রোগ বেড়েছে। বছরের যেকোনো মাসে বিশেষ করে গরমের মৌসুমে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করতে হবে। হাত-মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে। এই রোগ ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির জিনিসপত্র ব্যবহার করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
সিলেটে আবারও শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাসব্যাপী কর্মসূচি ডিএনসিসির
সর্বশেষ খবর
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
একযুগ পর দলছুট, সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরী
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি