X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এনআইডিতে ভুল, সংশোধন চেয়ে এক জেলাতেই প্রতিদিন দেড় হাজার আবেদন

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৫

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল হালিম মুনির। তার স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) স্বামীর নামে আংশিক ভুল থাকায় আটকে যায় পাসপোর্টের আবেদন। তাকে এনআইডি সংশোধনের পরামর্শ দেয় পাসপোর্ট অফিস। কিন্তু সংশোধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। অনলাইনে এনআইডি সংশোধনের আবেদন করে দেড় মাস উপজেলা-জেলা কার্যালয়ে ঘুরেছেন। এখনও সংশোধন হয়নি।

তার মতো একইভাবে এনআইডির ভুল সংশোধনের আবেদন করে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে শত শত আবেদনকারীকে। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরীর থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ২১টি কার্যালয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার এনআইডির ভুল সংশোধনের আবেদন জমা পড়ে। অনেকের দ্রুত হয়ে যায়। কারও কারও দীর্ঘ সময় লাগে।

আবদুল হালিম মুনির বলেন, ‘আমার স্ত্রীর এনআইডিতে স্বামীর নাম আবদুল হালিম রয়েছে। নামের শেষ অংশে মুনির না থাকায় পাসপোর্ট আবেদন আটকে যায়। এ কারণে কম্পিউটার দোকানে গিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর সব কাগজপত্র দিয়ে এনআইডির ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করি। এই কাজের জন্য কম্পিউটার দোকানিকে দিতে হয় ২০০ টাকা। আবেদনের কিছুদিন পর রাউজান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে ভুল সংশোধনের আবেদনের কপি নিয়ে যোগাযোগ করি। তারা কম্পিউটারে দেখে বলেন, এটির সংশোধন রাউজান নির্বাচন অফিসে নয়; ভুল সংশোধনের জন্য যেতে হবে চট্টগ্রাম শহরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে আবেদনের কপি জমা দিই। কয়েক দিনের মধ্যে ভুল সংশোধন হলে মোবাইলে এসএমএস যাবে বলে আশ্বস্ত করেন নির্বাচন কর্মকর্তা। কিন্তু দেড় মাসেও হয়নি।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে আবেদনকারীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা

এনআইডির ভুল সংশোধনের আবেদন এবং রাউজান ও চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে দৌড়াদৌড়ি করে এক হাজার টাকার বেশি গাড়ি ভাড়া খরচ হয়েছে জানিয়ে আবদুল হালিম মুনির বলেন, ‘অনলাইনে সব কাগজপত্র দিয়ে ভুল সংশোধনের আবেদন করার পরও কেন নির্বাচন অফিসে ধরনা দিতে হবে? আমার স্ত্রীর এনআইডিতে যে ভুল সেটি নির্বাচন অফিসের কারণে হয়েছে। তাদের ভুলে আমাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের ওপরে-নিচে শত শত লোকের ভিড়। যাদের বেশিভাগই এনআইডির ভুল সংশোধন করতে এসেছেন। এ সময় অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে গেছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে কথা হয় পটিয়া উপজেলার নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এনআইডিতে আমার জন্ম তারিখ ভুল আছে। সংশোধনের জন্য প্রথমে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন আদালতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট থেকে হলফনামা নিতে। এরপর সব কাগজপত্র দিয়ে হলফনামার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করি। হলফনামা পেয়ে নির্বাচন কমিশনে ভুল সংশোধনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করি। আবেদনের পর পটিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, এই ভুল সংশোধনের জন্য যেতে হবে জেলা নির্বাচন অফিসে। আবারও সব কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিই। এখনও সংশোধন হয়নি।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ভেতরে অপেক্ষায় আবেদনকারীরা

‘সব কাগজপত্র অনলাইনে জমা দেওয়ার পরও কেন ভুল সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসে ধরনা দিতে হবে’ এমন প্রশ্ন রাখেন নুরুল ইসলামও।

এনআইডির ভুল সংশোধন করতে গিয়ে আমাকেও হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে অভিযোগ করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নাম সোহাগ বানু। তার এনআইডিতে বাংলায় আছে সোহাগ বানু, আর ইংরেজিতে সোহাগ বাবু। এটি সংশোধনের জন্য আমাকে অনলাইনে আবেদন করে সব প্রক্রিয়া শেষে সংশোধন করতে হয়েছে। এজন্য এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়াতে দুই মাস গেছে।’

আবেদনকারীদের অভিযোগ, এনআইডির ভুল সংশোধন করা নিয়ে জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিসে একশ্রেণির দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। যাদের কবলে পড়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবেদনকারীরা। ভুল সংশোধনে অনলাইনে আবেদনের পর নির্বাচন অফিসে আসা না লাগলে দালালদের উৎপাত কমতো। সেইসঙ্গে ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

এনআইডির ভুল সংশোধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার জানিয়ে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ সাজ্জাদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এনআইডিতে ভুলের কারণে জমি রেজিস্ট্রি, সন্তানের স্কুল-কলেজে ভর্তি, পাসপোর্টসহ অনেক কাজ আটকে যাচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন আমাদের কাছে আসেন অনেকে। ম্যাজিস্ট্রেট থেকে হলফনামা নিতে হয়। এজন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করা লাগে। এসব করতে গিয়ে অনেকে ভোগান্তির শিকার হন। সংশোধন প্রক্রিয়া আরেকটু সহজ করা দরকার।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আবেদনকারীরা

চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এনআইডির ভুল সংশোধনের জন্য প্রতিদিন এফিডেভিট করতে ৩০-৩৫টি আবেদন আদালতে জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই করে এফিডেভিট দিতে হয়। এজন্য সময় লাগে।’

এনআইডির ভুল সংশোধনের জন্য জেলার ২১টি নির্বাচন কার্যালয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার আবেদন জমা পড়ে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এসব আবেদনের মধ্যে কিছু আছে বড় ভুল, কিছু আছে ছোট ভুল। যেগুলো ছোট ভুল সেগুলো এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিনের মধ্যে সংশোধন হয়ে যায়। যেগুলো বড় বড় ভুল এগুলো একটু যাচাই-বাছাই করে দেখতে হয়। সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। তবে অনলাইনে আবেদন করলেই হয়। আবেদনকারীকে সরাসরি অফিসে না আসলেই হয়। এরপরও অনেকে অফিসে চলে আসেন। তারা মনে করেন অফিসে না এলে তাড়াতাড়ি ভুল সংশোধন হবে না। তবে এক্ষেত্রে আবেদনকারীদের সমস্যায় পড়ার কথা নয়।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ভুয়া এনআইডি তৈরি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা
রাষ্ট্রপতি পেলেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা স্মার্ট এনআইডি
এনআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার ৬
সর্বশেষ খবর
যৌথভাবে হাইপারসনিক অস্ত্র-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র
যৌথভাবে হাইপারসনিক অস্ত্র-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র
সরকারের একমাত্র কাজ নিজেদের বিত্ত তৈরি ও অন্য দেশের স্বার্থ রক্ষা করা: মির্জা ফখরুল
সরকারের একমাত্র কাজ নিজেদের বিত্ত তৈরি ও অন্য দেশের স্বার্থ রক্ষা করা: মির্জা ফখরুল
ক্রিকেটের ‘প্রথম মডিউলার’ স্টেডিয়ামে হবে ভারত-বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ
ক্রিকেটের ‘প্রথম মডিউলার’ স্টেডিয়ামে হবে ভারত-বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ
যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিএনপির আশায় গুড়েবালি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিএনপির আশায় গুড়েবালি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
রণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউজরণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ