ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে আড়াই হাজারের বেশি গরু-ছাগল কোরবানি করা হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে পাওয়া কোরবানির পশুগুলো উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্য দুই হাজার ১০০টি গরু ও ৬৭৮টি ছাগল।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের অতিরিক্ত কমিশনার (আরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা দুপুরে বলেন, আড়াই হাজারের বেশি কোরবানির পশু পাওয়া গেছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এই সংখ্যা কিছুটা বাড়তেও পারে। আপাতত যেসব কোরবানি গরু পেয়েছি, সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানো হচ্ছে। পশুগুলো জবাইয়ের পর মাঝিদের সহযোগিতায় ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বাংলাদেশে ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা মুসলিম হওয়ায় তারা ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ক্যাম্পে কিছু বিত্তবান রোহিঙ্গা নিজেদের টাকায় ভাগাভাগি করে গরু কিনেছেন।
টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (উপসচিস) আব্দুল হান্নান বলেন, এবার রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু পাওয়া যায়নি। তবে কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভাগ করে কোরবানি পশু কিনছে বলে শুনেছি।
টেকনাফ লেদা ক্যাম্প ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, তার ক্যাম্পে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারে ২৮ হাজার মানুষের বসতি। তারা গত ঈদে গরু মাংস পায়নি। এবার তার ক্যাম্পের লোকজনের ঈদে কোনও বরাদ্দ পায়নি। তবে ক্যাম্পে কিছু লোকজন মিলেমিশে কোরবানি গরু কিনেছেন।
কর্মকর্তারা জানান, লেদা ও রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরোনো রোহিঙ্গাদের বাইরে থেকে গরু দেওয়া হচ্ছে না। কারণ সচ্ছল হওয়ায় এদের অনেকেই নিজ উদ্যোগে পশু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। তবে মিয়ানমার থেকে গত আগস্টের পর পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের পশু কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, বাংলাদেশে সবমিলিয়ে সব মিলিয়ে ১২টি ঈদ পার করতে যাচ্ছি। আমরা মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় ২-৩টি বড় গরু কোরবানি দিতাম। কিন্তু এখানে আসার পর সেই সুযোগ হয়নি। অনন্ত এবারে আমরা ১০ জন মিলে একটি ছোট গরু কিনেছি। ছয়টি বছর পার হচ্ছে যাচ্ছে। তবুও আমাদের কোনও কূল-কিনারা হচ্ছে না। এরপরও আমাদের আশা অনন্ত আগামী বছর ঈদ নিজ দেশে মিয়ানমারে উদযাপন করতে চাই।
টেকনাফের জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল রহমান বলেন, আমার অধীনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসতি। সন্ধ্যার ভেতরে কোরবানি পশু পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এদিকে ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরোনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন।