X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এক শতবর্ষী খালের আকুতি!

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০০

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপশহরের উত্তর প্রান্তে সাপের মতো বয়ে গেছে মাইথারকান্দি খাল। ভারত থেকে আসা গোমতী নদীর শাখা নদ কালাডুমুর থেকে মাইথারকান্দির উৎপত্তি। এককালে এই খাল ছিল এই জনপদের একমাত্র যোগাযোগব্যবস্থা। বাণিজ্য ও সময়ের প্রয়োজনে এই খাল পাড়ে গড়ে ওঠে একটি নগর, যার নাম গৌরীপুর।

বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপরে একটি উল্লেখযোগ্য বাজার গৌরীপুর। এই বাজারের জন্মে যার অবদান আর প্রতিদিন কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হতো যাকে ঘিরে, সেই খালকেই গলা টিপে হত্যা করছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাই একরকম মুমূর্ষু অবস্থায় টিকে আছে খালটি।

জানা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলার মাইথারকান্দি-গৌরীপুর খাল গোমতীর শাখা নদ কালাডুমুর থেকে উৎপত্তি হয়ে গৌরীপুর বাজার এবং সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয় হয়ে মাইথার কান্দি, পলুদ্দির পার, পেন্নাই, হরিপুর, আমিরাবাদ, ইছাপুর, তিনচিটা হয়ে বারিকান্দি, রাঙা সিংগুলিয়া, সুন্দলপুর, জুরানপুর, গোয়ালমারি, মোল্লাকান্দি হয়ে খিরাই নদে মিশেছে। খিরাই নদ আবার মেঘনায় যুক্ত হয়েছে। এটি বড় খাল নামেও পরিচিত।

বিভিন্ন জায়গায় দখলের কারণে সরু হয়ে এসেছে খালটি

আনুমানিক ১২ কিলোমিটারের বেশি মাইথারকান্দি খাল কয়েকটি ইউনিয়ন অতিক্রম করেছে। এ খালের পানি দিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকরা বোরো ধানের আবাদসহ সব ধরনের ফসলে সেচের সুবিধা পেতেন। সেই সুবিধা আগের মতো নেই। কারণ বর্তমানে গৌরীপুর বাজারের বর্জ্যে খালের মুখ ভরাট হয়ে আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় দখলের কারণে সরু হয়ে এসেছে খালটি। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদনও।

সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশের বাজার ও খাল ঘুরে দেখা গেছে ভয়ংকর দখলের চিত্র। মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের বাঁ পাশে দাউদকান্দি বাজারের একটি বড় অংশ। বাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময়ে চোখে পড়লো পরিষ্কার ও শুকনো সব গলি। বাজারের শেষ প্রান্তে সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের গেট। বাজারের পাশেই বিদ্যালয়টি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে খাল ডিঙিয়ে, এভাবে শতাধিক শিক্ষার্থীকে যেতে হয় প্রতিদিন।

খালের দিকে নজর পড়লেই মনে হয়, খালটি বাঁচার জন্য আকুতি করছে, চিৎকার করে সহযোগিতা চাচ্ছে। খালপারে দাঁড়ালেই নাকে আসে উৎকট গন্ধ। বেশিক্ষণ থাকার উপায় নেই বললেই চলে। খঅলেরও ওপর দাঁড়কাকের দল লাপিয়ে-ঝাঁপিয়ে খালে পড়ে থাকা আবর্জনা থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, হাসপাতালের আবর্জনা, হোটেল-রেস্টুরেন্টের উচ্ছিষ্ট খাবার, বিভিন্ন কলকারখানার কেমিক্যাল খালের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ ছাড়া মরা মুররি, মরা পশু-পাখি, গণশৌচাগারের ময়লাসহ এর পানিকে করে তুলেছে বিষাক্ত। এমন কোনও ময়লা বাদ নেই, যা এই খালের বুকে নেই।

শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মাঝেই খালটি মরে যাবে

মাইথারকান্দি খালের আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মাঝেমধ্যে এই এলাকায় আসা দায় হয়ে দাঁড়ায়। শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষার্থীরাও দুর্গন্ধে অনুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রামবাসী বারবার এ নিয়ে কথঅ বললেও কেউ এগিয়ে আসেনি এ খাল উদ্ধারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীরা ছাড়া কেউই এই খালে ময়লা ফেলেন না। পাঁচ বছর ধরে এই খালে অধিক পরিমাণে ময়লা ফেলা হচ্ছে, যে কারণে খালটির এই দশা। শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে কয়েক বছরের মাঝেই খালটি মরে যাবে। এতে কয়েক হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে।

উপজেলার আমিরাবাদের বাসিন্দা হানিফ খান বলেন, এই খালে একসময় উপচে পড়া পানি ছিল। এটি দিয়ে নৌকা চলতো। জেলেরা মাছ ধরতেন। কৃষক এর পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করতেন। প্রকৃতিও সুন্দর ছিল। অথচ এটি এখন মরা খাল। ১০ বছর ধরে খালটির এমন দুরবস্থা। খালটিকে বাঁচিয়ে তুলতে কেউ এগিয়ে আসেনি। এটিকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি।

স্থানীয় কৃষি ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, এভাবে একটি খালকে ভরাট পরিবেশের জন্য হুমকি। বিশেষ করে আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের কৃষকরা তা অনুভব করছেন। আগে এসব গ্রামে খালের মাধ্যমে সেচের পানি যেতো। এখন তা আর হচ্ছে না। অচিরেই খালটিকে আগের রূপ ফিরিয়ে দিয়ে কৃষকদের বোরো উৎপাদনে আগ্রহী করার আহ্বান জানাই। এতে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারের পরিবেশও বদলে যাবে।

বাজারের সব বর্জ্য ব্যবসায়ীরা ফেলছেন খালে

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যের জন্য এই খালচির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। একসময় এই খালে নৌকা ভিড়তো। খালের তীরে ছেলে-মেয়েরা লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে গোসল করতো। জেলেরা মাছ ধরতো। রান্নার কাজে এই খালের পানি ব্যবহার হতো। এখন তো এসবের প্রশ্নই আসে না। আমরা চাই এই নদী তার শৈশব ফিরে পাক।

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিনুল হাসান বলেন, এটি কয়েকবার পরিষ্কার করা হয়েছে। আবারও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আবর্জনা ফেলার জন্য আমরা জায়গা খুঁজছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, বিভিন্ন সময়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের সচেতনের চেষ্টা করেছি। খালটি সচলের জন্য আমরা পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপপরিচালক মো. আইউব মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি আসার পর থেকে খবর নিচ্ছি কোথাও কোনও আবাদি জমি পতিত অবস্থায় আছে কি না! এই খালের খবর আমি জানতাম না। আমি এক্ষুনি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
‘সরকার রাস্তার জমি উদ্ধার করতে পারে, নদী কেন পারে না?’
রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন
রাজধানীর খালে-ড্রেনে কী ফেলা হচ্ছে, দেখানোর আয়োজন করেছে ডিএনসিসি
সর্বশেষ খবর
৩০০ ফুট সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ‘ওভার স্পিড’ মামলা
৩০০ ফুট সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ‘ওভার স্পিড’ মামলা
৪৪৮ হজযাত্রীর ভিসা হয়নি, এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি
৪৪৮ হজযাত্রীর ভিসা হয়নি, এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি
‘গাঁজা সেবনে’ বাধা দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩
‘গাঁজা সেবনে’ বাধা দেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, আহত ৩
ব্রিটেনে এক পাউন্ডে ১৫০ টাকা, আবার দরপতন
ব্রিটেনে এক পাউন্ডে ১৫০ টাকা, আবার দরপতন
সর্বাধিক পঠিত
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্প, সাড়ে তিন বছরে হলো ১৩ শতাংশ কাজ
৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্প, সাড়ে তিন বছরে হলো ১৩ শতাংশ কাজ