ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় স্ত্রী তাছলিমা আক্তারকে (২০) হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার দায় পুলিশের স্বীকার করেছে। নিহত তাছলিমা সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বাসুদেব গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছোট মেয়ে এবং আখাউড়ার হীরাপুর মধ্যপাড়ার সৌদি প্রবাসী আবদুল হামিদের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী।
পুলিশ, বিজিবি ও নিহতের স্বজনেরা জানান, গত সাত-আট মাস আগে মোবাইল ফোনে সৌদি প্রবাসী আবদুল হামিদের সঙ্গে তাছলিমার বিয়ে হয়। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে আসেন হামিদ। গত শুক্রবার দুই পরিবারের লোকজন হামিদ ও তাছলিমার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ওই দিন নববধূকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। অর্থাৎ বিয়ের চার দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুছ মঙ্গলবার দুপুরে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান। বোনের রক্তাক্ত লাশ দেখে ভগ্নিপতিকে ওই সময় সে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় হামিদ তাকেও ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনে হামিদের সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন দুই পরিবার। বোনকে জীবিত স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে কোনও ঝামেলা হয়েছে কি না জানি না। বোনের লাশ দেখে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করলে সে ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। বোন হত্যার বিচার চাই।
এদিকে আজ বুধবার দুপুরে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর বড়মুড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় আটকের পর আখাউড়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ বলছে, গ্রেফতারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী আবদুল হামিদ দাবি করেছেন, তার স্ত্রী মোবাইল ফোনে টিকটক দেখতো। অন্য ছেলের সঙ্গে চ্যাটিং করতো বলে স্ত্রীকে নিয়ে তার সন্দেহ ছিল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে তাছলিমা ঘটনার দিন সকালে বাবার বাড়িতে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয়নি। এসব ঘটনা থেকেই স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা নেন। এরই অংশ হিসেবে ঘটনার দিন দুপুরে বাজার থেকে ছুরি কিনে বাড়ি ফিরেন। দুপুরে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ছুরি দিয়ে স্ত্রীর গলা, পেট ও বাম হাতে আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই স্ত্রী তাছলিমার মৃত্যু হয়।
ঘটনা সম্পর্কে ২৫ বিজিবি (সরাইল) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরমান আরিফ জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করার চেষ্টাকালে টহলরত বিজিবি সদস্যরা আসামিকে আটক করেছে। পরে আখাউড়া থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়।
আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় নিহতের স্বামী আবদুল হামিদকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।