X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ মিনার নেই রায়পুরের ৮৭ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১২

বাঙালি জাতিসত্তার গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া বিশ্বের একক জাতি হিসেবে এই গৌরবের ৭২ বছর পূর্ণ হচ্ছে এবার। এত দিন পরে এসেও নিজের প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার প্রায় ৮৭ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

উপজেলাটিতে প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ২৭৬টি। এরমধ্যে ২৪০টিতেই নেই স্থায়ী শহীদ মিনার। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ৮৭ ভাগ। ফলে একুশে ফেব্রুয়ারির দিন অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে অথবা পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয়। এই শহীদ মিনার না থাকার নানান অজুহাত দেখাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। আর এটাকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

রায়পুর উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আছে ১২১টি। এর মধ্যে মাত্র ৮টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার আছে। আর কিন্ডারগার্টেনসহ ৬৮টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু থাকলেও শহীদ মিনার নেই একটিতেও। এছাড়া রায়পুরে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আছে ৫৫টি। এগুলোর ২৩টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার আছে। আর মাধ্যমিক সমমানের ২১টি দাখিল মাদ্রাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই।

উপজেলাটিতে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১১টি। এরমধ্যে সরকারি কলেজ একটি, বেসরকারি কলেজ চারটি এবং মাদ্রাসা ছয়টি। এসব প্রতিষ্ঠানের পাঁচটিতে শহীদ মিনার আছে। আর ছয়টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুর সরকারি কলেজে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে। অন্য চারটি বেসরকারি কলেজের মধ্যে তিনটিতে থাকলেও রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজে নেই। আর মাদ্রাসা ছয়টির মধ্যে রায়পুর কামিল মাদ্রাসা (আলিয়া) অধীনে থাকা পুরাতন শহীদ মিনার রয়েছে। তবে হায়দরগঞ্জ টিআরএম কামিল (আলিয়া) মাদ্রাসাসহ পাঁচটি ডিগ্রি সমমানের ফাজিল মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই।

উপজেলার অন্যতম বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজেও নেই স্থায়ী শহীদ মিনার (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

রায়পুর পাইলট বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর নাহার বলেন, ‘জমি ও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে আমরা শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারিনি। এ জন্য উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাই। এবার শহীদ মিনার না থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চাওয়া হলে আমাদের বিদ্যালয়ের নাম তালিকাভুক্ত করে দিয়েছি।’ একইরকম বক্তব্য দেন চরআবাবিল, চরপক্ষি, চরইন্দ্রুরিয়া, কাঞ্চনপুর, বামনী, সোনাপুর, দেনায়েতপুর, রাখালিয়া ও চরবংশীসহ ১৫টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

রায়পুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখনও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করি। স্থায়ী ক্যাম্পাস হলে সেখানে শহীদ মিনার স্থাপন করা হবে।’ একই কথা জানান রেয়ার মডেল ও চরবংশী মডেল স্কুলের প্রধান।

রায়পুর রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য রড বালু এনে রাখা হয়েছে।’ 

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি) সৈয়দ ইকবাল হোসেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘এত বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়াটা দুঃখজনক। দ্রুত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলার অন্যতম পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হায়দরগঞ্জ টিআরএম কামিল মাদ্রাস প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯২৮ সালে। প্রায় শতবর্ষ ছুঁতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটিতেও নেই স্থায়ী শহীদ মিনার। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল আজিজ মজুমদার বলেন, ‘অর্থ ও পরিকল্পনার অভাবে মাদ্রাসা আঙিনায় প্রায় ৭২ বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণ করা যায়নি। সরকারি বরাদ্দ পেলে দ্রুত নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম সাইফুল হক বলেন, সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে নিজ আঙিনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান জায়গা ও অর্থের অভাবে তা করতে পারেনি। মাদ্রাসাগুলোতেও নিজস্ব প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার নেই। সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও স্থগিত রাখবে শিক্ষা বোর্ড।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় নির্মাণের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। শহীদ মিনার না থাকা বিদ্যালয়ের তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রতি মাসে পাঠানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার না থাকাটা দুঃখজনক। উপজেলার সবগুলো প্রতিষ্ঠানে যাতে শহীদ মিনার নির্মাণ হয়, শিগগিরই সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ