চট্টগ্রামে এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগার একদিন পর দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। খাতুনগঞ্জে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) পাইকারিতে চিনির দাম বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। খুচরায় চিনির দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানিরা।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এস আলম গ্রুপের চিনি প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৯৮০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার ৩০ টাকায়। যা একদিন আগে এর দাম ছিল ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। একই অবস্থা অন্যান্য ব্র্যান্ডের চিনির দামেও। সোমবার খুচরায় প্রতি কেজি চিনি ১৪২ টাকা বিক্রি হলেও সেটি মঙ্গলবার ১৪৫-১৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান বলেন, আজ মঙ্গলবার সব ব্র্যান্ডের চিনির দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এস আলমের চিনি কলে আগুন লাগার খবরে হঠাৎ দাম বেড়েছে।
নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার মুদির দোকানে খবর নিয়ে জানা গেছে, এখানে কেজি প্রতি চিনি ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি অনেক দোকানি আজ ভোক্তাদের চাহিদা মতো চিনি বিক্রি করেননি।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকালে ৩টা ৫৩ মিনিটে নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্যারটেক ইছাপুর এলাকায় অবস্থিত চিনির কারখানায় আগুন লাগে। আগুনে একটি গুদামের অন্তত এক লাখ টন চিনি পুড়ে গেছে। একদিন পার হলেও সেখানে পর্যন্ত আগুন জ্বলছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে পুড়ে যাওয়া চিনি কল দেখতে যান এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগুনে গুদামে রক্ষিত চিনি ক্ষয়ক্ষতি হলেও কারখানার কোনও ক্ষতি হয়নি। ফলে দুয়েকদিনের মধ্যে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা যাবে। তবে এখনও আমাদের কাছে চিনির পর্যাপ্ত মজুত আছে। রমজানের চাহিদা মেটানোর মতো চিনি মজুত আছে। দাম বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
এস আলম গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একই স্থানে আমাদের মোট ছয়টি গুদাম আছে। সোমবার ১ নম্বর গুদামে আগুন লাগে। গুদামটিতে এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি অপরিশোধিত চিনি ছিল। যার সবটুকুই পুড়ে গেছে। যার বাজার মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি। গুদামটিতে এখনও আগুন জ্বলছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ছয়টি গুদাম আছে। এর মধ্যে চারটি গুদামে অপরিশোধিত চিনি রাখা হয়, বাকি দুটি গুদামে পরিশোধনের পর বিক্রি উপযোগী চিনি রাখা হয়। এক লাখ টন চিনি পুড়লেও এখনও দুটি গুদামে বিক্রি উপযোগী ২৫-৩০ হাজার মেট্রিক টন চিনি মজুত আছে। আগুন নেভার পর এসব চিনি বিক্রি করা হবে। এ ছাড়াও বাকি তিনটি গুদামে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত চিনি মজুত আছে। এ ছাড়াও আরও চিনি আমদানি পর্যায়ে আছে। সবমিলিয়ে চার লাখ মেট্রিক টনের মতো অপরিশোধিত চিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের অধীনে আছে। যে কারণে রমজানে চিনির দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।
এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আকতার হাসান বলেন, আগুনে একটি চিনির গুদাম পুড়ে গেছে। তবে আমাদের যে পরিমাণ চিনি মজুত আছে তা দিয়ে দেশে কোনও চিনির সংকট হবে না। বাজারে চিনির দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি দাম বাড়িয়ে দেয় তার ব্যবস্থা নেবেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান বলেন, অপরিশোধিত চিনি ভর্তি যে গুদামটি পুড়েছে সেটিতে বিপুল পরিমাণ চিনি ছিল। আগুন লাগার কারণে দেশের বাজারে যাতে চিনির দামে কোনও প্রভাব না পড়ে এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। আজও বাজারে দুই জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাজারে চিনির দাম বেড়েছে তা শুনিনি। যদি কেউ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (প্রশাসন অর্থ) জসিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগুন এখনও নেভেনি। পুরোপুরি নিভতে সময় লাগবে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ৯ ইউনিট নির্বাপণে কাজ করছে। গুদামটির চারপাশ থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে।