X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৫০০ টাকার ওপরে কোনও খেজুরই আমদানি হয় না, বাজারে ২ হাজার

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
১৩ মার্চ ২০২৪, ১০:০১আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৮:৫৬

খেজুরের মধ্যে আজওয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুম ও মাসরুক দামি এবং পরিচিত। এসব খেজুরের প্রতি কেজি আমদানিতে খরচ হয় চার ডলার অর্থাৎ ৪৫০ টাকার মতো। প্রতি ডলারে ৫২ টাকা ২৯ পয়সা করে ২০৯ টাকা ১৬ পয়সা কেজিতে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় আমদানিকারকদের। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১০ টাকা পরিবহন ব্যয়। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৬৭০ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। হিসাবে সব খরচ বাদে কেজিতে এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা লাভ করেন আমদানিকারকরা। এ কারণে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে এই বিদেশি ফল।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, জাত ও আকার অনুযায়ী দেশে অন্তত ২৫ ধরনের খেজুর আমদানি হয়। এগুলোকে চার ক্যাটাগরিতে ফেলে শুল্ক নেয় কাস্টমস। ক্যাটাগরিগুলো হলো—প্যাকেটজাত, কার্টন, বস্তায় ভরা শুকনো ও ভেজা। এর মধ্যে আজওয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুম ও মাসরুক প্রথম ক্যাটাগরির। সব খরচ বাদ দিয়ে এর দাম এক হাজারের বেশি হওয়ার কথা ছিল না। অথচ এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হিসাবে কেজিতে হাজার টাকার বেশি লাভ করছেন আমদানিকারকরা। 

কার্টনজাত ক্যাটাগরির আমদানি মূল্য ২ দশমিক ৭৫ ডলার অর্থাৎ ২৮৫ টাকা। এগুলোর আমদানি মূল্য ২ দশমিক ৫০ ডলার ধরে ১৩০ টাকা শুল্ক নেওয়া হয়। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় যোগ করলে দাম দাঁড়ায় ৪২৫ টাকা। অথচ এই মানের খেজুর চট্টগ্রামের বাজারে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো এবং শুকনোটা এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ যার দাম থাকার কথা ছিল ৪৫০-৫০০ টাকার মধ্যে।

সবচেয়ে দামি খেজুরের প্রতি কেজি আমদানিতে খরচ হয় চার ডলার

বস্তায় ভরা শুকনো খেজুরের আমদানি মূল্য ২ ডলার। ১৩০ টাকা নেওয়া হয় শুল্ক। এই মানের খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। যার দাম থাকার কথা ছিল ৪০০ টাকার মধ্যে।।  

বস্তায় ভরা ভেজা খেজুরের আমদানি খরচ পড়ে এক ডলার। শুল্ক পরিশোধ করতে হয় ৫২ টাকা ২৯ পয়সা। এ ধরনের খেজুরের দাম ২০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা ছিল। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। মূলত এই চার ক্যাটাগরির মধ্যে থেকেই দেশে ২৫ ধরনের খেজুর আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা।

সবচেয়ে দামি খেজুরের কেজি সর্বোচ্চ চার ডলারে আমদানি হয় বলে জানালেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার সুলতানুল আরেফিন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি দামের খেজুর আমদানি হয় না। অর্থাৎ ৫০০ টাকার ওপরে নয়। সবচেয়ে কম দামি খেজুরের আমদানি মূল্য এক ডলার। আমদানি মূল্যের ওপর প্রতি ডলারে ৫২ টাকা ২৯ পয়সা করে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। শুল্ক-করের কথা বলে আমদানিকারকরা যে খেজুরের দাম নিয়ে বাজার অস্থির করে তুলেছেন, তা এক ধরনের প্রতারণা।’ 

বর্তমানে বাজারে ২৫ ধরনের খেজুর রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম ফলমন্ডির খেজুর ব্যবসায়ী মেসার্স জিহান এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদুল আলম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। মানভেদে কেজিতে ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাইকারিতে। এখন বাজারে ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে খেজুরের কেজি।’ 

প্রতি ডলারে ৫২ টাকা ২৯ পয়সা করে ২০৯ টাকা ১৬ পয়সা কেজিতে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় আমদানিকারকদের

চট্টগ্রাম ফলমন্ডি ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ইরান থেকে আমদানি করা মরিয়ম খেজুর এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০, সৌদি মরিয়ম এক হাজার ৬০০-৭০০, আজওয়া এক হাজার ৭০০-৮০০, মাবরুম এক হাজার ২০০-৫০০, সুফরি মরিয়ম ৭৫০-৮০০, আম্বার ও সাফাভি ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০, সুফকারি ৮০০-৯০০ এবং বস্তার ভরা ভেজা খেজুর ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস জানিয়েছে, গত আট মাসে (২০২৩ সালের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি-২০২৪) পর্যন্ত দেশে ৪৫ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এবার রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হলেও বাজারে কমছে না দাম। শুল্ক বৃদ্ধির অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার রমজান ঘিরে প্রচুর খেজুর আমদানি হয়েছে। রমজানে ঘাটতির সুযোগ নেই। তবে শুল্ক বৃদ্ধির অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা। আসলে সেভাবে শুল্ক নেওয়া হয় না। গত আট মাসে ৪৫ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে আমদানি হয় ৮৬১ মেট্রিক টন, আগস্টে ৩৫৩ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বরে ৬৯৯ মেট্রিক টন, অক্টোবরে ২৩৪১ মেট্রিক টন, নভেম্বরে ২১১০ মেট্রিক টন, ডিসেম্বরে ৬০১৬ মেট্রিক টন, জানুয়ারিতে ৬১৬৯ মেট্রিক টন ও ফেব্রুয়ারিতে ২৬ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮৪ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছিল ৮৮ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছিল ৬২ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন।’

খেজুরের বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত

তবে ফলকে বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করাটা অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বাজেটে ফলকে বিলাসী পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর গত ১ জুলাই থেকে খেজুরে শুল্ক বাড়ানো হয়। এ কারণে দাম বেড়েছে। শুল্ক কমানোর জন্য আমরা বারবার তাগাদা দিয়েছি দায়িত্বশীলদের। চলতি মাসে শুল্ক কমানো হলেও তা কাঙ্ক্ষিত নয়। ফলে এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। যার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।’

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ মাসে ৪৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার তাগিদ
সর্বশেষ খবর
বংশালে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বংশালে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে মুখোমুখি হবেন বাইডেন-ট্রাম্প, যা জানা গেলো
প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে মুখোমুখি হবেন বাইডেন-ট্রাম্প, যা জানা গেলো
পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে চলতো কারসাজি
পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যেভাবে চলতো কারসাজি
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে গ্রেফতার ২০
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে গ্রেফতার ২০
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম