দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাকে যুক্ত করেছে এই মহাসড়কটি। তাই অন্যগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ চাপ সামলাতে হয় দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ককে। সেই সঙ্গে কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়ক, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যাতায়াত করেন লাখ লাখ মানুষ।
ঈদযাত্রা শুরুর আজ তৃতীয় দিনেও এই মহাসড়কের কোথাও তেমন কোনও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু স্থানে অতিরিক্ত পরিবহনের চাপে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ১০৪ কিলোমিটার। এই ১০৪ কিলোমিটারে আবার যুক্ত আছে কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক সড়ক। যা আরও ১০টির বেশি জেলাকে এই মহাসড়কে যুক্ত করেছে। বিগত বছরগুলোতে সড়ক সংস্কার, সড়ক দখল, অবৈধ পার্কিং, হাটবাজারসহ বিভিন্ন কারণে যানজট সৃষ্টি হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বদলে যায় এই মহাসড়কের চিত্র। সড়ক সংস্কার করে ইউরোপের আদলে তৈরি করা হয় চট্টগ্রামের এই একমাত্র সড়ক পথটিকে। হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের যত্নে একরকম নতুন করেই গড়ে তোলা হয় এই অঞ্চলকে। যে কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই এই অঞ্চলের মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ১০৪ কিলোমিটারের শুরু হয়েছে দাউদকান্দি থেকে আর শেষ হয়েছে চৌদ্দগ্রাম এলাকায়। দাউদকান্দির শহিদনগর, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, টোল প্লাজা, চান্দিনা অংশের চান্দিনা বাজার, মাধাইয়া বাজার, বুড়িচং অংশের ক্যান্টনমেন্ট ও নিমসার বাজার, সদর দক্ষিণ অংশের পদুয়ার বাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রাম অংশের চৌদ্দগ্রাম বাজার যানজটপ্রবণ এলাকা। কিন্তু রবিবার (৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই মহাসড়কের কোথাও কোনও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শহিদনগর, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাজার, নিমসার বাজার, চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় যান চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এর বড় কারণ যানবাহনের চাপ। সেই সঙ্গে আছে যাত্রী ওঠানামা ও সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং।
চট্টগ্রাম থেকে আসা তিশা বাসের যাত্রী মো. শাহপরান বলেন, ‘চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় যানজট ছিল। তবে সেটি বেশি নয়। কিন্তু কুমিল্লা অংশের কোথাও গাড়ি দাঁড়ায়নি। চৌদ্দগ্রাম বাজারে চট্টগ্রামমুখী লেনে ধীরে ধীরে গাড়ি চলছে।’
ঢাকা থেকে আসা এশিয়া বাসের চালক ওমর ফারুক বলেন, ‘গত কয়েক বছর যানজট নেই। শান্তিতে আছি। আগে এক ট্রিপ নিয়ে সকালে রওনা হলে বিকাল হইতো। অনেকে অসুস্থ হয়ে যেত রাস্তায়। এখন ঢাকা শহর থেকে বের হলে ভালোভাবেই আসা যায়। কিন্তু কুমিল্লা অংশের যেসব এলাকায় ধীরগতি আছে সেগুলো না থাকলে আরও দ্রুত আসা যেত। এখন আমরা কয়েক ট্রিপ আনা-নেওয়া করতে পারি। তাই আয়ও বেড়েছে।’
কুমিল্লার বোগদাদ পরিবহনের চালকের সহকারী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘চাঁদপুর যেতে আগে বিভিন্ন জায়গায় জটলা লাগতো। আমাদের সময়ও বেশি লাগতো। যাত্রীরাও আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যেতেন। কিন্তু এখন আর এমন নেই। তবে মুদাফরগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ধীরগতি থাকে।’
ঢাকাফেরত এশিয়া এয়ারকনের যাত্রী মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘এভাবে থাকলে সবার ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। ভেবেছি যানজট পড়বে তাই ভোরে রওনা হয়েছি। কিন্তু এত দ্রুত আসতে পারবো ভাবিনি। টোল প্লাজায় একটু দাঁড়াতে হলো বাকি রাস্তায় গাড়ি চলেছে।’
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘আমাদের প্রশিক্ষিত টিম কাজ করছে। আমাদের মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরে রাখি। পুলিশ টহলে আছে। কোনও খবর পেলেই আমাদের কুইক রেসপন্স টিম কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, এবারের ঈদযাত্রা হবে এই অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বেশি স্বস্তির। আমি যাত্রী ও চালকদের প্রতি অনুরোধ জানাই, আপনারা ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। আপনাদের ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে হাইওয়ে পুলিশ মাঠে থাকবে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘আমরা সকল উন্নয়নকাজ বন্ধ রেখেছি। কোথাও কোনও সড়ক ভাঙা নেই। কোথাও কোনও সড়কের সমস্যা হলে আমরা তাৎক্ষণিক মেরামত করে দিচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।’