‘আমার লাল স্বাধীনতা আমার থেকে আমার আব্বুকে কেড়ে নিছে।’ জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেন তার ছেলে মাকসুদ আলম। গত শুক্রবার রাতে দেওয়া স্ট্যাটাসটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় নোয়াপাড়ার আছদ আলী মাতুব্বরের বাড়ি জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়।
এরআগে, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায় জুমার নামাজে অংশ নিতে মসজিদে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৫৫)। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষ পাড়ার আছদ আলী মাতুব্বরের বাড়ির কাছে সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নিহত ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে গিয়ে আব্বাস উদ্দিন (২৯) নামে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে বিরাজ করছে আতংক। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনও মামলা হয়নি। প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে আজ শনিবার দুপুরে নোয়াপাড়া পথেরহাট এলাকায় মানববন্ধনসহ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচি থেকে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য নোয়াপাড়া এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রবাসে অবস্থান করা ফজলহক বাহিনীর প্রধান ফজলহককে দায়ী করা হয়েছে। তার সন্ত্রাসীরাই ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে চাঁদা দাবি করেছিল। চাঁদা না পেয়ে তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে।
নিহতের ছোট ভাই মো. দিদারুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়া থেকে দশ দিন পর ঢাকায় আসেন জাহাঙ্গীর আলম। ব্যবসার কাজে তিনি মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে নগরীর বাসা থেকে মা-বাবার কবর জিয়ারত ও মসজিদে নামাজ পড়তে শহরের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। মসজিদে পৌঁছার আগে সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে ও গুলি করে খুন করেছে। আমার ভাই কোনও রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়। আমাদের ধারণা কোনও সন্ত্রাসী তার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে খুন করেছে।’
নিহতের চাচাতো ভাই ইকবাল মাসুদ বলেন, তিনি এলাকায় দানবীর ও সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় মসজিদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বাড়ির পাশে নিজস্ব জায়গায় মাদ্রাসা নির্মাণের কথা চলছিল। আমি যতদূর জানি তার প্রকাশ্য কোনো শত্রু নেই। তবে, কে বা কারা কী কারণে তাকে হত্যা করছে বুঝতে পারছি না। প্রকাশ্যে দিন-দুপুরে তাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করলেও পুলিশ এখনও কোনও আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের আগ মুহূর্তে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গতিবিধির ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যায়, অস্ত্রধারীরা সবাই মুখোশ পরা ছিল। তারা মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশায় করে ঘটনাস্থলে আসে। সংখ্যায় ছিল ১০ থেকে ১৫ জন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সফিকুল আলম বলেন, 'ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় এখনও থানায় মামলা হয়নি। কোনও আসামি গ্রেফতার করা যায়নি।'
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, ‘রাউজানে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনার পর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।'