নোয়াখালীর চাটখিল থানায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেছেন বিএনপির এক নেতা। তবে মামলার আসামি ওই সাংবাদিককে চেনেন না দাবি করে এই নেতা বলেছেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তে মামলাটি করেছি। তবে আমি শুধু এজাহারে স্বাক্ষর স্বাক্ষর করেছি। উল্লেখিত সব আসামিকে চিনি না।’
মামলার আসামি ওই সাংবাদিকের নাম ইকবাল হোসেন মজনু। তিনি জাগো নিউজ ও দৈনিক খবরের কাগজের নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি চাটখিল উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিষয়টি জানাজানি হলে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এটিকে সাজানো মামলা বলছেন জেলার সাংবাদিকরা।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুজব ছড়িয়ে চাটখিল থানার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বানসা বাজারে পিস্তল, ককটেলসহ দেশীয় অস্ত্র হাতে মিছিল করেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ৮৪ জনকে আসামি করে চাটখিল থানায় মামলা করেন মাসুদ আলম। এই মামলায় সাংবাদিক মজনুকে ৫৫ নম্বর আসামি করা হয়।
এটিকে পরিকল্পিত সাজানো মামলা উল্লেখ করে সাংবাদিক ইকবাল হোসেন মজনু বলেন, ‘নোয়াখালীর বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে আমি বিভিন্ন সময়ে সংবাদ করেছি। এর আগেও শহরের বিভিন্ন স্থানে এডিট করা ছবি দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল একটি পক্ষ। এবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অথচ ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। আমাকে হয়রানির করার জন্য আসামি করা হয়েছে।’
নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলমগীর ইউসুফ বলেন, ‘অনিয়মকারীরা নিজেদের দোষ আড়াল করতে অতীতের মতো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার আশ্রয় নিয়েছে। তবে এসব মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করা যাবে না। আমি সাংবাদিক ইকবাল হোসেন মজনুর বিরুদ্ধে মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটি সাজানো মামলা।’
বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মহাসচিব মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরার জন্য একজন পেশাদার সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। অবিলম্বে মজনুর নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মাসুদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তে মামলাটি করেছি। তবে সব আসামিকে আমি চিনি না। ওই দিন থানায় বসে দলের নেতারা মামলার এজাহারে স্বাক্ষর করতে বলেছেন। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। মামলার আসামি ওই সাংবাদিককে চিনি না আমি।’
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এক সাংবাদিককে আসামি করার বিষয়টি পরে জেনেছি। যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ ছিল না। নির্দোষ হলে তিনি মামলা থেকে বাদ যাবেন।’
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘সাংবাদিককে কেন আসামি করা হলো, তা চাটখিল থানায় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’