চট্টগ্রামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ২৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পরিবারের সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) অর্থঋণ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধ করেননি নুরুল ইসলাম বিএসসি। খেলাপি ঋণ আদায়ে গত বছর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। খাতুনগঞ্জ শাখার পক্ষে সিনিয়র অফিসার মো. আরিফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন।’
আদালত সূত্র জানায়, মামলায় নুরুল ইসলামের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম, ছেলে মুজিবুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও ওয়াহিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সানোয়ারা বেগম সাবেক মন্ত্রীর মালিকানাধীন সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, মুজিবুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্য তিন ছেলে একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। বাদীপক্ষ থেকে জানানো হয়, ২২ কোটি ৮২ লাখ ৮৮ হাজার ৭০৭ টাকা ৩৬ পয়সা খেলাপি ঋণ আদায়ের দাবিতে এ মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই ঋণ বেড়ে ২৭ কোটি টাকা হয়েছে। নুরুল ইসলাম বিএসসির স্ত্রী সানোয়ারা বেগমের সম্পত্তি রায়ের আগে অগ্রিম ক্রোক করার আবেদন জানান বাদী। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বিবাদীরা ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপি এবং ২০১৩ সালের আগে ঋণ গ্রহণের পর থেকে বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়েও ঋণ পরিশোধ করেননি।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তফসিলভুক্ত সম্পত্তি কেন ক্রোক করা হবে না, তা আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।
এর আগে উত্তরা ব্যাংকের ৩০ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। গত বছরের ২১ অক্টোবর অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
নুরুল ইসলাম বিএসসি ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মালিকানাধীন সানোয়ারা গ্রুপের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে।
এর মধ্যে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড এবং ইউনিল্যাক সানোয়ারা বিডি লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান জামানত ছাড়াই উত্তরা ব্যাংক থেকে ৩৭ কোটি টাকার ঋণ নেয়। ব্যক্তিগত নিশ্চয়তার ভিত্তিতে এই ঋণ দেওয়া হলেও ১৪ বছর পরও কোনও অর্থ পরিশোধ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ২০ কোটি টাকার এলসি ঋণসীমা, ১৫ কোটি টাকার ট্রাস্ট রিসিট ঋণ এবং দুই কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া হয়। তবে ২০১৫ সালে এসব ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, উত্তরা ব্যাংক সানোয়ারা গ্রুপকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে, যা আর্থিক খাতের সুশাসনের পরিপন্থি।
২০১৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ উপাদান দিয়ে আইসক্রিম উৎপাদনের অভিযোগে সানোয়ারা ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তৎকালীন অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ ১৪৫ কেজি স্ট্রবেরি ট্রপিং, ডার্ক কম্পাউন্ড চকলেট এবং ২০ কেজি হানি রিটেল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।