পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরিতে কাপড় সরবরাহের অভিযোগে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতার ভাইসহ গ্রেফতার তিন জনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (০৩ জুন) দুপুরে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহিম খলিল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম ও আতিকুর রহমান। এর মধ্যে তারিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৮ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের ছোট ভাই এবং তাদের পারিবারিক মালিকানাধীন ‘ওয়েল কমপোজিট নিট কেমিক্যাল ফেব্রিকস ডাইং’ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এর আগে সোমবার রাতে নগরের চান্দগাঁওয়ের কালুরঘাট এলাকার কারখানা থেকে ওই তিন আসামিসহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামালুল ইসলাম নামের আরেক আসামির রিমান্ড আবেদন করেনি পুলিশ। চার আসামিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘গ্রেফতার তিন আসামির ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে পাঁচ দিন করে মঞ্জুর করেন আদালত।’
রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, আসামিরা ওয়েল কমপোজিট নিট কেমিক্যাল ফেব্রিকস ডাইং মালিক কর্মকর্তা হয়ে কেএনএফ পোশাক তৈরির জন্য বায়েজিদের রিংভো অ্যাপারেলস নামের একটি পোশাক কারখানায় ফেব্রিকস সরবরাহ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় জড়িত বাকিদের শনাক্ত করা প্রয়োজন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে তিন দফায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কেএনএফের প্রায় অর্ধলাখ ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। এর মধ্যে গত ২৭ মে রাতে পাহাড়তলী থানার ডিটি রোডে অবস্থিত নুর ফ্যাশন অ্যান্ড গার্মেন্টস কারখানা থেকে কেএনএফের ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, পোশাকগুলো কেএনএফের ইউনিফর্ম। মহালাসিন মারমা নামের এক সন্ত্রাসী ৫০ লাখ টাকা চুক্তিতে এগুলো তৈরির অর্ডার দেয়। এ ঘটনায় নুর ফ্যাশন অ্যান্ড গার্মেন্টস কারখানার মালিক মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার (০১ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহীম খলিল শুনানি শেষে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ওই দিনই রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন।
এর আগের দিন ২৬ মে রাতে নগরের অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি পোশাক জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ১৮ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এজাহারে পুলিশ বলেছে, দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের অর্ডার নেওয়া হয়। এ ঘটনায় কারখানাটির মালিকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। এর মধ্যে সাহেদুল কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির অর্ডার এনেছেন। এই মামলায় গ্রেফতার তিন জন ছাড়াও রাঙামাটির মহালাসিন মারমাকে আসামি করা হয়।