X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গোলাপের গ্রাম সাভারের বিরুলিয়া

নাদিম হোসেন, সাভার
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৪৯আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫২

রাজধানীর মিরপুরের তুরাগ নদীর পাড় ঘেঁষে দ্বীপের মতো গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম। যার নাম বিরুলিয়া। এই গ্রামের নামেই ইউনিয়নটির নামকরণ করা হয়েছে বিরুলিয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটলে মনে হবে এ যেন গোলাপের রাজ্য। বাণিজ্যিক বা সখের বসেই হোক না কেন এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই যেন গোলাপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সাভারের বিরুলিয়ায় গোলাপের বাগান



বিরুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামবসীদের সঙ্গে কথা বলে জনা গেছে, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করে। খুব কম সময়ের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গ্রামটিতে।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর ও শ্যামপুর এলাকায়। প্রায় দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ করে আসছে। ফলন আর চাহিদা ভালো হওয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে এ চাষির সংখ্যা।
ফুলের গ্রামটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সব জায়গাতেই গোলাপ চাষ করা হয়েছে। সকালে গোলাপের বাণিজ্যিক বাগান গুলোতে কাউকে কোনও কাজ করতে দেখা যায়নি। তবে দুপুরের পর প্রতিটি বাগানেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফুল কাটা, ফুল বাছাই, ফুল ভেজানো, ফুল বাঁধা সবই যেন কৃষক শেষ করেন সন্ধ্যের আগে। কারণ সন্ধ্যোর পরই জমে মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুর ফুল বাজার। যেখানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলের পাইকাররা এসে ফুল কেনেন।
গোলাপ চাষের জনপ্রিয়তা নিয়ে জানতে চাইলে চাষি সবুর বলেন, গোলাপ চাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। এতে খুব কম ঝুঁকি থাকে কারণ একবার চাড়া রোপন করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়। একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়, যা অন্য কোনও সবজি চাষে এমন সুবিধা পায় না কৃষকরা। এছাড়াও বিক্রিরও কোনও ঝামেলা নেই। বাড়ির কাছে সৃষ্ট ফুলের বাজার গুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। সাভারের বিরুলিয়ায় গোলাপের বাগান
ফুলের বাগানে কথা হয় কৃষক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে মেরিন্ডা, হাজারি, লিংকন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকা এই ফুল চাষ।
সাভার কলেজের শিক্ষার্থী আইয়ুব রানা জানান, বাবার সঙ্গে তিনি এ ব্যবসার হাল ধরেছেন। ১১০ শতাংশ জায়গায় গোলাপের চাষ করেছেন। তাদের চাষ করা গোলাপ ঢাকা, চট্টগ্রাম এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি (ভালোবাসা দিবস), একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখ, নববর্ষসহ বিশেষ দিনে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুন। দামও পাওয়া যায় ভালো।
মোস্তাপাড়া ফুল বাজারে কথা হয় টাঙ্গাইলের ফুল ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের কাছে এই এলাকার গোলাপের চাহিদা অনেক। গ্রামটিতে গোলাপের চাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদনও অনেক থাকে। তাই আমরা চাহিদা অনুযায়ী গোলাপ কিনতে পারি।
বিরুলিয়া ফুল চাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজার গুলোতে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখতো তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজার গুলোতে।
শুধু যে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি এ গ্রামটিতে তা নয়, গোলাপের গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের এসব বাগান গুলোতে।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, মাঠ ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। গোলাপ চাষে যেন উদ্যোক্তা আরও বেশি লাভবান হন তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও উন্নত ফলনের জন্য যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।
/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ দল
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ দল
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
সর্বাধিক পঠিত
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার