X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে মেঘনার পেটে নরসিংদীর শত শত ঘরবাড়ি

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী
২৩ জুলাই ২০২০, ১৯:১৮আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২০, ১৯:২৭

ভাঙনের কবলে পড়া একটি এলাকা নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চলের তিন ইউনিয়নে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি। হুমকির সম্মুখীন বিভিন্ন গ্রাম। খোলা আকাশের নিচে ও অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ঘরবাড়ি হারানো মানুষ। অনেকে এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্যত্র। মেঘনা নদীতে যত্রতত্র ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হলেও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।  

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই রায়পুরায় মেঘনা নদীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের চাঁনপুর, চরমধুয়া ও শ্রীনগর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের শত শত বাড়িঘর, গাছপালাসহ ফসলী জমি। দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে এসব ইউনিয়নের অনেক গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ মাঠ, মসজিদ, কবর স্থান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

গত ১০ দিনে চরাঞ্চলের তিন ইউনিয়নে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরমধ্যে রয়েছে চাঁনপুর ইউনিয়নে ১৫টি বাড়িঘরসহ পুরো ইমামদিরকান্দি গ্রাম। একই ইউনিয়নের কালিকাপুর ও সদাগরকান্দি গ্রামে ২৫টি বসতভিটা ও অনেক ফসলী জমি নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে।

শ্রীনগর ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামে একটি মসজিদসহ ৩০টি বাড়িঘর মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়েছে। চরমধুয়া ইউনিয়নের বীরচরমধুয়া গ্রামে নতুন করে ২০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামটির একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাইমারী স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও ঈদগাহ। গত বছর চাঁনপুর, চরমধুয়া ও বীরচরমধুয়া গ্রামের শতাধিক পরিবার মেঘনার ভাঙনে গৃহহীন হয়েছেন। প্রতি বছর নদী ভাঙনের মির্জাচরে অর্ধশত পরিবার ভিটামাটি ও বহু ফসলী জমি বিলীন হয়ে যায়। মেঘনার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে, স্কুল, মসজিদ ও বাজার। এছাড়া রায়পুরার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের মহেষভেড় গ্রামেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনের ফলে বসতভিটা ও ফসলী জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব এলাকার মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চাঁনপুর ইউনিয়নের তিনটি মৌজায় মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু মহাল ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব বালু মহালের ইজারাদাররা মেঘনায় দিনরাত সমানতালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিয়মবর্হিভূতভাবে বালু উত্তোলন করছেন। ইজারাকৃত সীমানা ছাড়িয়ে যত্রতত্র ও মেঘনার তীরবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এসব বালু উত্তোলনে একাধিক প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় স্থানীরা প্রতিবাদও করতে পারছেন না। অপরিকল্পিতভাবে ইজারা প্রদান করা তিনটি বালুমহালের লোকজন সীমানা ছাড়িয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হলেও নজরদারি নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

শ্রীনগর ইউনিয়নের পলাশতলী গ্রামের কৃষক বজলুল হক বলেন, প্রতি বছরই ভাঙনের কবলে পড়ে বাপ দাদার ভিটাবাড়ি, জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। সবকিছু হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়ছি। 

চাঁনপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আজগর মিয়া বলেন, গত তিন বছরে এই গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে ১৮টি বাড়িঘর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এখন আমাদের আর কোনও সম্পদ অবশিষ্ট নেই। চাঁনপুরে মেঘনা নদীতে বালু কাটার কারণেই এই ভাঙন হচ্ছে।

ইমামদিরকান্দি গ্রামের সিদ্দিক মিয়া ও মুলহাজ বেগম বলেন, তিনবার ভাঙনের ফলে আমাদের পুরো গ্রামই নাই হয়ে গেছে। এখন আমরা কোথায় আশ্রয় নিবো বুঝতে পারছি না।

চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন বলেন, ড্রেজারে মাটি কাটার কারণে কয়েকটি গ্রামের মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে অন্যত্র গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার নদীতে বালু মহাল ইজারা দিয়েছে, কিন্তু ইজারাদাররা মহালের সীমানা ছাড়িয়ে লোকজনের রেকর্ডকৃত (সিএস, আরএস, এসএ) জমি থেকে বালু তুলছে। এ কারণে এলাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চাঁনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোমেন সরকার বলেন, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে এসব বালু মহাল বন্ধের জন্য দীর্ঘ ৯ বছর ধরে আবেদন জানিয়েও কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। নদী ভাঙন রোধে বালু উত্তোলন বন্ধ করা, বেড়িবাধ নির্মাণ ও আশ্রয়হীনদের জেগে উঠা চরের খাস জমিতে বসবাসের ব্যবস্থাকরণের দাবি জানাচ্ছি।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বলেন, বালু মহালের সীমানা ছাড়িয়ে বালু উত্তোলন করা হলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বালু তোলার কারণে যদি নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে বালু মহাল বন্ধ করে দেয়া হবে এবং গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। চাঁনপুর ও চরমধুয়া ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন ঠেকাতে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
আল্লাহর ঘরে বসে দেশবাসীর জন্য দোয়া করেছি: মির্জা ফখরুল
আল্লাহর ঘরে বসে দেশবাসীর জন্য দোয়া করেছি: মির্জা ফখরুল
শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে ফিরেছেন সাকিব-মোস্তাফিজ
শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে ফিরেছেন সাকিব-মোস্তাফিজ
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধের বিষয়ে যা বলছে বিটিআরসি
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধের বিষয়ে যা বলছে বিটিআরসি
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা