মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ফাঁসানোর জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেকর্ড করেছিল শিক্ষার্থীরা। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের সদস্যরা।
হৃদয় মণ্ডলের পরিবারে আতঙ্ক, স্কুলে যাচ্ছে না ছেলে
এ বিষয়ে কথা হয় মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ-ই-হাসান তুহীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শিক্ষক সরলভাবে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু এক ছাত্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার কথা রেকর্ড করে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ানো হয়। এরপর ১২ জন শিক্ষার্থী তার নামে অভিযোগ করে। প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এমনকি তারা তার বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালায়।
বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। আমাদের মনে হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সেটা শিক্ষক-ছাত্রের কথাবার্তা শুনে বোঝা যায়। তার পরিবারও খুব আতঙ্কের মধ্যে আছে। মেয়েটি স্কুলেও যেতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো বিজ্ঞান ও ধর্মের বিরোধ নতুন না, এটা প্রাচীন। আমি মনে করি বিজ্ঞান ভিত্তিক একটি জাতি গড়ার বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান তারা এ ঘটনার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। শিক্ষক হিসেবে হৃদয় মণ্ডলকে মেধাবী এবং মুক্তমনা দাবি করেন প্রেসক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ-ই-হাসান তুহীন।
‘ধর্ম অবমাননার কথা শুনিনি, প্রধান শিক্ষকের কথায় মামলা করেছি’
অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ বার সমিতির সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, অডিও ক্লিপটি আমরা শুনেছি। সেখানে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে কথা হয়েছে। এই বিষয়টি অসুস্থ মস্তিষ্কে রেকর্ড করা হয়েছে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্য ও পরিকল্পিত বিষয় না হলে ক্লাসরুমে কেউ অননুমোদিত মোবাইলফোন নিয়ে যেতো না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে। আমরা প্রথমে জামিন পাওয়ার বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
যে কারণে জামিন হয়নি বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ সকালে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
পরে বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান মো. আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করেন। গত ৪ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১ এ জামিন শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। তবে, আগামী রবিবার (১০ এপ্রিল) আবার জামিন শুনানি হবে বলে জানা গেছে।