X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘টাকা চাই না, আমার স্ত্রীর লাশটা চাই’

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
১৪ নভেম্বর ২০২২, ১৭:২৮আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৩৭

‘সব দোষ আমার। আমার জন্যই সে বিদেশে গিয়েছিল। বিদেশে না গেলে আজ হয়তো এভাবে তার মৃত্যু হতো না। আমি অসুস্থ মানুষ, আমাকে ফেলে রেখে চলে গেছে। আমার স্ত্রীর লাশটা দেখতে চাই। তার লাশটা নিজ হাতে কবর দিতে চাই। টাকা চাই না, আমার স্ত্রীর লাশটা চাই।’

কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে একটি বাড়িতে আগুন লেগে মারা যাওয়া আছিয়া বেগমের (৫০) স্বামী ইসমাইল হোসেন। তিনি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভার কুমারগাতা এলাকার বাসিন্দা জরিপ আলীর মেয়ে আছিয়া বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ইসমাইল হোসেনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর ইসমাইল অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামী অসুস্থ ও চার ছেলেমেয়ে ছোট থাকায় পরিবারের হাল ধরতে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন আছিয়া বেগম।

২০১০ সালে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি মালদ্বীপে পাড়ি জমান। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানো। কিন্তু এর আগেই মালদ্বীপে আগুনে তিনি পুড়ে মারা যান। গত ১০ নভেম্বর সকাল ১০টায় হঠাৎ বড় মেয়ে নুর নাহারের মোবাইল ফোনে কল আসে মালদ্বীপ থেকে। সে সময় তার মায়ের মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়। এই খবরে মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

আছিয়া বেগমের মেয়ে নুর নাহার বলেন, ‘আমার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমরা চার ভাই-বোনও ছোট ছিলাম। পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় সংসারের হাল ধরতে মা মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মা চেয়েছিল সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে। কিন্তু তার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না। এখন আমার মায়ের লাশটা ফেরত চাই। আমার মায়ের লাশটা দ্রুত দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা নেওয়া জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

বড় ছেলে আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মা বিদেশে যায়। আমি রিকশা চালাই, ছোট ভাই ইটভাটা শ্রমিক। আমাদের রোজগারের টাকা মাকে খাওয়াতে পারলাম না। শেষবারের মতো মায়ের লাশটা দেখতে চাই। মায়ের লাশটা ফেরত দেন।’

আছিয়া বেগমের ছোট ভাই তাজমল হোসেন বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ থাকায় সংসারের হাল ধরতে আমার বোন বিদেশে পাড়ি জমায়। তার ইচ্ছা ছিল স্বামীর চিকিৎসা ও সংসারে অভাব-অনটন দূর করার। বাড়িতে ভালো ঘর করার। কিন্তু তার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না।’  

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মালদ্বীপে মারা যাওয়া আছিয়ার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তার পরিবার খুবই দরিদ্র। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে একটি বাড়িতে আগুন লেগে বাংলাদেশিসহ ১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মালের মাফান্নু এলাকার ওই বাড়িতে থাকতেন তারা। যেখানে আগুন লেগেছিল, এটি ঘনবসতি এলাকা হিসেবে পরিচিত।

/এফআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চীনা সামরিক প্রতিনিধি দলের মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সফর
বাংলাদেশে কথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা নিয়ে যা ভাবছে দিল্লি
চিকিৎসায় ভারতীয় বিমান ব্যবহারের অনুমতি দিলো না মালদ্বীপ, কিশোরের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!