X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক পরিবারের ৮ জন দৃষ্টিহীন, কষ্টে কাটে দিন

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩০আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৪৪

প্রথমে বাবা, পরে সন্তান, তারপর নাতিরা—একে একে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন তারা। এখন এই পরিবারের আট জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দিনে একবেলা খেলে আরেকবেলায় খাবার জোটানো দায়। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংকট থেকে পরিবারটি বের হতে পারছে না। মাঝেমধ্যে খাবার সহায়তা পেলেও কারও কাছ থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সহায়তা পাননি এই পরিবারের সদস্যরা।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার উজিলাব (হলাটিরচালা) গ্রামের হোসেন আলীর পরিবারের ১০ সদস্য। এর মধ্যে আট জনই জন্মান্ধ। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোসেন আলী ২০০২ সালে মারা যান। একটি চোখে কিছুই দেখতেন না। আমৃত্যু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। চার ছেলেমেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছেন। স্ত্রী রাশিদা বেগম অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করে বিয়ে দেন। পরে তাদের ঘরের সন্তানরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মান। বংশ পরম্পরায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় এখন তারা শঙ্কিত। চিকিৎসাসেবায় কেউ এগিয়ে এলে গ্লানি মুছে যাবে—এমন স্বপ্ন দেখেন তারা।

দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা হলেন—হোসেন আলীর ছেলে আমির হোসেন, আমিরের স্ত্রী শিউলি আক্তার, আমিরের বোন নাসরিন আক্তার, হাসিনা আক্তার, আমিরের ভাই জাকির হোসেন, জাকির হোসেনের সন্তান জোনাকি আক্তার ঝিনুক, হাসিনার মেয়ে রূপা আক্তার ও ছেলে মারুফ মিয়া। এর মধ্যে হোসেন আলীর চার ছেলেমেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও অন্যরা পান না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অবস্থায় ২০০২ সালে স্বামী মারা গেছেন উল্লেখ করে হোসেন আলীর স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ‘মারা যাওয়ার সময় জন্মান্ধ চার ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন। তাদের লালনপালন করে বিয়ে দিয়েছি। এখন তাদের ঘরের সন্তানরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করছে। এ নিয়ে বিপদে আছি।’

একবেলা খেলে আরেকবেলায় না খেয়ে থাকতে হয় জানিয়ে রাশিদা বেগম বলেন, ‘একদিন ভাত মিললে আরেকদিন তরকারি মেলে না। খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটে আমাদের। সরকারিভাবে পাওয়া মাসিক ভাতা ১৫ দিনে শেষ হয়ে যায়। মাসের বাকি দিন খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।’

আমির হোসেন বলেন, ‘আমি কোনও উপার্জন করতে পারি না। একবেলা খাইলে আরেকবেলায় খাবার পাই না। আগে বাউল গানের আসরে ঢোল বাজাতাম। প্রতিবন্ধী হওয়ায় এখন কেউ নেয় না। তিন মাস পরপর ২২৫০ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এই টাকায় সংসার চলে না। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। সরকারিভাবে কম দামে যে পণ্য বিক্রি হয় তার কোনও কার্ড পাই না। প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ায় তা থেকেও বঞ্চিত আমরা।’

হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমার এক ছেলে এক মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। লেখাপড়া করতে পারে না। পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় কষ্টে দিন কাটে আমাদের। আমরা চিকিৎসা সহযোগিতা চাই।’ 

জাকির হোসেন বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার সময় ছোট ছিলাম। ছোট থেকে এ পর্যন্ত বেড়ে উঠলেও কোনও ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমার মেয়ে জোনাকি দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীন হয়ে জন্ম নেওয়ায় তার বয়স যখন এক বছর তখন তার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ যদি আমাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হতো। সমাজের আর ১০ জন মানুষের মতো আমরা বাঁচতে চাই।’

হোসেন আলীর পরিবারের আট সদস্য দৃষ্টিহীন

খুব কষ্টে সংসার চলে জানিয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, ‘তিন মাস পরপর সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সরকারিভাবে ২২৫০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। আমরা সমাজে বাঁচার জন্য সহযোগিতা চাই।’

ছোটবেলা থেকেই আমি দৃষ্টিহীন জানিয়ে আমির হোসেনের স্ত্রী শিউলি আক্তার বলেন, ‘এক চোখে দেখি। ডান চোখে কিছুই দেখি না। শাশুড়িকে রান্নাবান্নার কাজে সহায়তা করি। বাবা-মা কেউ নেই। কোনও রকমে বেঁচে আছি।’

আমি আর দাদি ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিহীন জানিয়ে আমির হোসেনের ছেলে ইমন জানায়, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। আমার বাবা অনেক কষ্ট করেন। কেউ যদি পরিবারের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসতো তাহলে এই অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতো সবাই। দৃষ্টিহীন হওয়ায় কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না।’

উজিলাব গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন ও বশির আহমদ বলেন, ওই পরিবারের আট জন দৃষ্টিহীন। খুব কষ্ট করে চলে তাদের সংসার। পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে কেউ নেই। সরকারি সহায়তায় সংসার চলে না। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ জানাই।’

শ্রীপুর উপজেলা সামজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘হোসেন আলীর পরিবারের আট জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে মাঝেমধ্যে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। তাদেরকে উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের দায়িত্বশীল কেউ তাদের চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ নিলে সবচেয়ে ভালো হতো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
২৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন শাহীদা, পূরণ হয়নি যে আশা
পেনশনের টাকা নিয়ে গেছে একমাত্র ছেলে, বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে ঈদ কাটলো নিঃস্ব মায়ের
স্বজন ছাড়াই ঈদ কাটবে আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের
সর্বশেষ খবর
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, শহরজুড়ে আতঙ্ক
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, শহরজুড়ে আতঙ্ক
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৭ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলা বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৭ বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ শিলা বৃষ্টির পূর্বাভাস
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫