X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর

‘রানার সম্পত্তি নিহত-আহত শ্রমিক পরিবারকে দিতে হবে’

নাদিম হোসেন, সাভার
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৩০আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:১৫

আজ ২৪ এপ্রিল। দেশের পোশাকশিল্পের এক ভয়াবহ ও শোকাবহ দিন। এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, অনেকে হয়েছেন মানসিক রোগী। কেউবা আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে।

রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করেন নেতারা। নিহত ও আহতদের ‘লস অব আনিং’-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা এবং ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবিও জানান তারা।

এই দিনটি স্মরণে প্রতিবছর শ্রমিক সংগঠনগুলো আয়োজন করে নানা কর্মসূচি। সোমবারও (২৪ এপ্রিল) আয়োজন করা হবে বিভিন্ন দাবিদাওয়া-সংবলিত সেসব কর্মসূচি। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, রানা প্লাজার এখনও অনেক শ্রমিক রয়েছে, যারা ক্ষতিপূরণ পাননি। দ্রুত ওই সব শ্রমিককে লস অব আর্নিংয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

পুনরায় আন্দোলনের হুমকি দিয়ে এই শ্রমিকনেতা বলেন, সরকার সোহেল রানার যেসব সম্পত্তি জব্দ করেছে, সেসব সম্পত্তি নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। তা না হলে আবারও শ্রমিক সমাজ একত্র হয়ে আন্দোলনে নামবে।

এদিকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় করা মামলার ১০ বছর পার হয়ে গেলেও বিচারকাজ চলছে ধীরগতিতে। মোট তিনটি মামলার মধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ; ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক); আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিহতদের স্মরণে শহীদবেদি
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের ২৪ মে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ধ্বংসস্তূপে রানা প্লাজার সামনে নির্মাণ করেন এক শহীদবেদি। অস্থায়ী বেদিটির নামকরণ করা হয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। এই শহীদবেদিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন প্রতিবছর চালিয়ে আসছে নানা আন্দোলন-কর্মসূচি।

এই দিনটিতে রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর নিখোঁজ স্বজনদের আনাঘোনাও চোখে পড়ে। তারা এসে প্রিয়জনকে মনে করে চোখের জল ফেলে আবার চলে যান। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনও নানা দাবিতে এখানে আন্দোলন চালায়।

রানা প্লাজার বর্তমান চিত্র
অধিকাংশ ধংসস্তূপই সরিয়ে নিয়ে ফেলে দিয়েছে বংশাই নদীর পাড়ে। তবু এখনও কংক্রিটের সুরকি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে রানা প্লাজার ১৮ শতাংশ জমির ওপর। চারপাশটা কাঁটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। এর সামনেই বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে শহীদবেদি।

সোহেল রানার সম্পত্তি সরকারের দখলে
সোহেল রানার মালিকানাধীন রানা প্লাজার জমি, রানা টাওয়ারের জমি ও ধামরাইয়ের রানা ব্রিকসের জমি সরকার দখলে নিয়েছে। আদালতের নির্দেশে রানার মালিকানাধীন সবি জমি বাজেয়াপ্ত করে ঢাকা জেলা প্রশাসন দখল বুঝে নিয়েছে।

যা ঘটেছিল সেদিন
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রানা প্লাজায় অবস্থিত তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো সেদিনও সকাল ৮টায় হাজির হন নিজ কর্মস্থলে। মেশিনের আওয়াজে শুরু হয় উৎপাদন। হঠাৎ সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দ। আশপাশে উড়তে থাকে ধুলাবালু। আস্তে আস্তে ধসে পড়ে রানা প্লাজা ভবন। শুরু হয় আহত শ্রমিকদের আহাজারি। উদ্ধারে এগিয়ে আসে স্থানীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। চলে বিরতিহীন উদ্ধার অভিযান।

যা ছিল ভবনটিতে
রানা প্লাজার প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান, দ্বিতীয় তলায়ও ছিল দোকান আর ব্যাংক, তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডে, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে ও ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেডে, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টেস।

কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, বাড়তে থাকে আর্তনাদ। একে একে নিথর হয়ে পড়েন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আর ২ হাজার ৪৩৮ শ্রমিককে উদ্ধার করেন আহত অবস্থায়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, অনেকে হয়েছেন মানসিক রোগী।

স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি
এ ঘটনার জন্য সে সময় স্থানীয় প্রশাসনের গাফলতিকেই দায়ী করছিলেন আহত শ্রমিকরা। তারা বলেছিলেন, ভবনটি ধসের ২৪ ঘণ্ট আগে ৪ ও ৫ তলার কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছিল, যা দেখে শ্রমিকরা নিচে নেমে আসেন। খবর পেয়ে ছুটে যান সংবাদকর্মীরাও। তবে সংবাদকর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরে সংবাদকর্মীরা যোগাযোগ করেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। এ নিয়ে সংবাদও প্রচার হয়। পরে ওই দিন বিকালে ভবনের ফাটল দেখতে আসেন তৎকালীন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন সরদার।

তিনি ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘এ ফাটলে তেমন কোনও সমস্যা নেই, বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। সামান্য প্লাস্টার উঠে গেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।' এ বলে তিনি চলে যান। তার বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ঘটে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
ধর্ষণের পর শিশুকে হত্যা, জড়িতদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
কোরবানির পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: এখনও অপেক্ষায় স্বজনরা
সর্বশেষ খবর
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
গাজায় যুদ্ধবিরতি: মিসর ও কাতারের সঙ্গে হামাসের আলোচনা
গাজায় যুদ্ধবিরতি: মিসর ও কাতারের সঙ্গে হামাসের আলোচনা
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা