গাজীপুরে মাদ্রাসা ছাত্র সাব্বির রহমানের (১২) মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩১ মে) দুপুরে গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার ‘ইশায়াতুল কোরআন (আবাসিক) মাদ্রাসা’ থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ মে) মাদ্রাসার একটি কক্ষ থেকে পুলিশ সাব্বিরের মরদেহ উদ্ধার করে। ওইদিন বিকালেই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ছাত্রের লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
নিহত ছাত্র সাব্বির রহমান (১২) কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার পাতারকান্দি গ্রামের আবু বকরের ছেলে। সে দক্ষিণ ছায়াবিথী আবাসিক এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় বসবাস করে। বাবা দিনমজুর এবং মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালায়।
নিহতের বোন স্মৃতি আক্তার (২৫) জানান, সাব্বির প্রতিদিন দুপুরে গোসল ও খাবার খেতে বাসায় আসতো। কাজ শেষে সে আবার মাদ্রাসায় চলে যেতো এবং রাতে মাদ্রাসায় থাকতো। সকালের নাস্তা ও রাতের খাবার আমরা বাসা থেকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসতাম। অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল ৯টার দিকে তার জন্য মাদ্রাসায় খাবার দিয়ে বাসায় ফিরি আসি। আসার সময় সাব্বিরকে বেশ হাসিখুসি দেখে আসি। দুপুরে খবর পাই সকালে সাব্বিরের সতীর্থ আলিফকে ওই শিক্ষক বেশ মারধর করেছেন।
প্রতিবেশী আলিফের ভাগনে সানিও একই মাদ্রাসায় পড়ে উল্লেখ করে তিনি জানান, তারা সাব্বিরের মৃত্যুর খবর পায়। অন্যদের মতো সানি ওইদিন বাসায় গোসল ও দুপুরে খাবার খেতে যায়। বাসায় যাওয়ার সময় মাদ্রাসার শিক্ষকরা সাব্বিরের মৃত্যুর খবর কাউকে বলতে নিষেধ করে দেন। কিন্তু সানি তার মায়ের কাছে বিষয়টি বলে দিলে তার মা সাব্বিরের মাকে জানান। পরে স্মৃতি তার এক প্রতিবেশীকে নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসার একটি কক্ষে তার ভাই সাব্বিরের গলায় গামছা বাধা অবস্থায় মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে। মরদেহ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় ছিল।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের কাছে মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে জানান, সাব্বির গলায় গামছা বেঁধে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। তার হাতে ‘মৃত্যুর জন্য মাদ্রাসার কেউ দায়ী নয়, হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবি করলে তারা যেন তাকে মাফ করে দেন’ এমন একটি চিরকুট লেখা কাগজ দেখতে পায়। বিষয়টি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে জিএমপি’র সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকালে সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। বুধবার (৩১ মে) দুপুরে সাব্বিরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক রোমান আল মামুন।
এ ঘটনায় বুধবার (৩১ মে) দুপুরে সাব্বিরের বাবা আবু বকর বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। সাব্বিরের ভগ্নিপতি আলমগীর জানান, সাব্বির আত্মহত্যা করেনি। তার মাথায় ফোলা জখম রয়েছে। আর চিরকুটের লেখাও তার হতের নয়। এটি তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। মামলায় মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার পর মাদ্রাসা থেকে সাব্বির মৃত্যুর কোনও সংবাদ জানায়নি এবং শিক্ষক আসাদুজ্জামান তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রোমান আল মামুনও সাব্বিরের মাথায় আঘাতের চিহ্নের কথা স্বীকার করে বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এখনই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুরে ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পুলিশ মাদ্রাসার একটি কক্ষ থেকে সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই শিশুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বুধবার (৩১ মে) নিহতের বাবা মামলা দায়ের করলে দুপুরে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।