X
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রেনে আসে হানাদাররা, রাজাকারদের গুজবে নিরীহ বাঙালিদের ওপর নৃশংস তাণ্ডব

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:২০আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:২০

৫২ বছর আগের দিনটির কথা মনে হলে আজও শিউরে ওঠেন তারা। কিন্তু এই গণহত্যার বিচার পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। জোটেনি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কিংবা মর্যাদায়ও। বেদনাময় সেই রক্তাক্ত দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়-শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ইতলা গ্রামের এমন ঘটনার সাক্ষী অনেকেই এখনও জীবিত।

৭১ এর এই দিনটির ভয়াবহতা অনুভব করেছিল বড়ইতলা গ্রামের ৩৬৫ জন মানুষ। যাদেরকে পাকিস্তানি বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আর এমন হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি বাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় রাজাকাররা। যাদের প্রশ্রয়ে পাকিস্তানিরা নিমর্মভাবে হত্যা করে শত শত নিরীহ মানুষকে। জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয় কয়েকটি গ্রাম।

প্রতি বছর দুঃস্বপ্নের মতো বড়ইতলা গ্রামে ফিরে আসে ১৩ অক্টোবর। সেদিন কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে ৩৬৫ মানুষকে। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে স্বজনহারা লোকজন নীরবে চোখের জলে ভাসে। ইতিহাসের একটি নির্মম ঘটনার সাক্ষী মোমতাজ উদ্দিন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা বলতে গিয়েই কেমন যেন শিউরে ওঠেন।

ট্রেনে আসে হানাদাররা, রাজাকারদের গুজবে নিরীহ বাঙালিদের ওপর নৃশংস তাণ্ডব

তিনি জানান, একাত্তরের ১৩ অক্টোবর সকালে পাকসেনাদের একটি ট্রেন এসে থামে বড়ইতলা গ্রামের কাছে। সেখানে স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সমাবেশ করার চেষ্টা চালায় তারা। এ সময় রাজাকাররা এক পাকসেনাকে গ্রামবাসী হত্যা করেছে বলে গুজব রটিয়ে দেয়। এর পরই হিংস্র পশুর মতো নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী।

বড়ইতলা, চিকনিরচর ও দামপাড়াসহ আশপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক লোককে ধরে এনে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেল লাইনের পাশে জড়ো করে হানাদার বাহিনী। এক পর্যায়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৬৫ জনকে। এতে গুরুতর আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। দুঃস্বপ্নের মতো এখনও যেন সেই বীভৎস দিনগুলো তাকে তাড়া করে বেড়ায় মোমতাজ উদ্দিনকে।

রাস্তায় পাশে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতিসৌধ। নতুন প্রজন্মের কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী সাবরিনা আক্তার প্রতিদিনই কলেজে যাওয়া আসার পথে একবার হলেও চোখ বুলিয়ে দেখেন। তিনি জানান, পরিবারের গুরুজনদের কাছে এখানকার স্মৃতিসৌধের অনেক গল্প শুনেছি। শুনেছি কীভাবে এখানে নির্মমভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও নিহতরা আজও পাননি শহীদের মর্যাদা। আমরা চাই স্বজনহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হোক।

ট্রেনে আসে হানাদাররা, রাজাকারদের গুজবে নিরীহ বাঙালিদের ওপর নৃশংস তাণ্ডব

বড়ইতলা স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের জন্য জমি দান করেছিলেন মো. মর্ত্তুজ আলী। বর্তমান স্মৃতিসৌধটি তার দান করা সেই জমির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি খুব গর্বিত, তবে ১৩ অক্টোবর ছাড়া কখনও স্মৃতিসৌধটির খোঁজ কেউ না রাখায় আক্ষেপও রয়েছে অনেক। দিনের পর দিন স্মৃতিসৌধটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিল। বর্তমানে স্মৃতিসৌধটি রক্ষায় বাউন্ডারি ও গেট নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় জায়গাটি অরক্ষিত।

তিনি বলেন, এখানে যদি একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পাঠাগার স্থাপন করা হয়, তাহলে এর মর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে উঠে আসবে। আশা করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দ্রুত একটি পাঠাগারও এখানে তৈরি করা হবে।

বিভীষিকময় দিনটির কথা মনে হলে আজও শিউরে ওঠেন এলাকার প্রবীণ লোকজন। তাই বর্তমান সরকারের নিকট নিহতদের শহীদের মর্যাদা, স্থানীয় রাজকারদের বিচার, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পাঠাগার ও দিনটি সরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

/এফআর/
সম্পর্কিত
ভারতের বিরুদ্ধে অভিযানকে ১৯৭১ সালের প্রতিশোধ বললেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী
শাহাদাত বার্ষিকীতে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফকে স্মরণ
লালমনিরহাটে ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদে ডিসির অপসারণ চেয়ে সিপিবির মানববন্ধন
সর্বশেষ খবর
কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিলেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
কুমিল্লায় বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিলেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
রাজস্ব সংস্কারের শুরুতেই হোঁচট, বাড়ছে অনিশ্চয়তা
রাজস্ব সংস্কারের শুরুতেই হোঁচট, বাড়ছে অনিশ্চয়তা
পুতিন-জেলেনস্কির সঙ্গে সোমবার কথা বলবেন ট্রাম্প
পুতিন-জেলেনস্কির সঙ্গে সোমবার কথা বলবেন ট্রাম্প
তামিমের ৯ বছর পর ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি
তামিমের ৯ বছর পর ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি
সর্বাধিক পঠিত
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
ছাত্রলীগের ১৫ জন মিলে চার মিনিটের মিছিল, আটক তিন
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত