দীর্ঘদিন যাবৎ কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ষাটোর্ধ্ব ইউনুছ আলী। এই বয়সে এসে কায়িক পরিশ্রম করতে কষ্ট হচ্ছিল তার। চাইছিলেন অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবেন। অটোভ্যানের ব্যাটারি কেনার জন্য কিস্তিতে বিশ হাজার টাকা তুলে দেয় তার মেয়ে সাথী আক্তার। প্রয়োজন ছিল আরও ছয় হাজার টাকার। সেই টাকা জোগাড় করতে ফরিদপুরে এসে নির্মমভাবে খুন হয় ইউনুছ আলী।
এ ঘটনায় পরিত্যক্ত একটি মোবাইলের সূত্র ধরে জড়িত চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ। বুধবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন- নওগাঁ জেলার পল্লীতলা থানার কাঞ্চন গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (২৮), জয়পুরহাট সদরের নুরপুর গ্রামের আব্দুর রহমান (২৬), পাবনা জেলার সাথিয়া থানার কাবেরীকোলা গ্রামের আবুল কালাম (৩০) ও একই থানার মেহেদীনগরপুর গ্রামের জিয়া (২৩)। তারা সবাই ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটস্থ জন বিক্রির হাটে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতো।
গত ৮ অক্টোবর ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের কবিরপুরচর থেকে দিনমজুর ইউনুছ আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি মেহেরপুর জেলা সদরের দরবেশপুর এলাকার বাসিন্দা। তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য মালিক ও শ্রমিক সেজে পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা তাকে খুন করে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন (৫৭)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ইউনুছ আলী নিজ এলাকায় অটোভ্যান চালাতো। ভ্যানের ব্যাটারি নষ্ট হওয়াতে নতুন ব্যাটারি কিনতে ২৬ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। এরপর তার মেয়ে ২০ হাজার টাকা কিস্তিতে তুলে দেন। বাকি টাকা সংগ্রহের জন্য ওই ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফরিদপুরে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চলে আসেন।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর শহরের বাসস্ট্যান্ডের পাশে চায়ের দোকানে নিহতকে টাকা গুনতে দেখে আসামি জাহাঙ্গীর। বিষয়টি নিয়ে তার লোভ হলে অপর আসামি আব্দুর রহমানকে জানায়। তারা দুজন পরামর্শ করে আবুল কালাম ও জিয়াদের জানায়। এরপর তারা ওই দিন দুপুরে একত্র হয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক আসামি কালাম জমির মালিক এবং বাকিরা সাজে কৃষক। তারা ইউনুছ আলীকে তাদের সঙ্গে কাজ করার কথা বলে ওই দিন সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এ সময় কালাম তাকে মাটিতে ফেলে দেয়, জাহাঙ্গীর মুখ চেপে ধরে, আব্দুর রহমান গলা চেপে ধরে এবং জিয়া দুই পা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ১৮ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল নিয়ে চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপর আমরা লাশ উদ্ধারের এলাকা থেকে একটি পরিত্যক্ত মোবাইল ফোন খুঁজে পাই। এটির সূত্র ধরেই আবুল কালামকে শনাক্ত করা হয়। এরপর খুনের সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেফতার করা হয়।’
এদিকে, খুন করার পর চিকিৎসক সেজে নিহতের পরিবারের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে চিকিৎসার জন্য টাকা দাবি করেন আসামি জাহাঙ্গীর। বিষয়টি জানান নিহতের মেয়ে সাথী আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ও তার মা মনোয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।