গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হচ্ছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবারও ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী। ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষের শীর্ষ মুরুব্বিরা। বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর তিন ছেলে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইজতেমা ময়দানে আসেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ, মেজো ছেলে মাওলানা সাঈদ ও ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীসহ ১৪ জনের প্রতিনিধি দল। ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকে এসেছেন তারা। মুসল্লিরা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। তাদের উপস্থিতিতে রাত সাড়ে ৯টায় ইজতেমার প্রথম মাসোয়ারা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি মেহমান এসেছেন। ১৩ থেকে ১৪ হাজার বিদেশি মেহমান উপস্থিত হবেন এবং নিজামুদ্দিন থেকে আরও প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছাবেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর তিন ছেলেসহ ১৪ জনের প্রতিনিধি দল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও মুফতি ওসামা ইসলাম প্রমুখ। তাদের গাড়িবহর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইজতেমা মাঠে এসে পৌঁছায়।’
আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা মহিবুল্লাহ বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের পর্বে বিভিন্ন দেশ থেকে ১৩ থেকে ১৪ হাজারের বেশি মেহমান উপস্থিত হবেন। পাশাপাশি সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেওয়ার জন্য রওনা হয়েছেন।’
প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও একই ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানালেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আয়োজকদের যাতে কোনও প্রকার অসুবিধা না হয়, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।’
তাবলিগ জামাতের মধ্যকার বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। এক পক্ষ ঢাকার কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জুবায়ের ও অপর পক্ষ ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। প্রথম পর্বে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। পাকিস্তান থেকে আসা মাওলানা আহমদ বাটলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর শুরু হয় প্রথম পর্ব। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি। এই পর্বে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ময়দান বুঝে নেন। জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথমে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের কাছ থেকে ময়দান বুঝে নেন। পরে সাদ অনুসারীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসে মাইক, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টয়লেট, রান্নার স্থান, বিদেশি মেহমানখানাসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। পরে সব ঠিক আছে মর্মে জেলা প্রশাসককে জানালে সাদ অনুসারীর শীর্ষ মুরুব্বিদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।