গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কালা শিকদার ঘাট সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। দুই বছর আগে নির্মাণ করা হলেও সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নেই। কবে হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। খালের ওপর ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এ সেতু।
চলাচলের কোনও রাস্তা না থাকার পরও স্থানীয়দের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় কালা শিকদার ঘাট সেতু। দুই বছর আগে সড়ক ছাড়াই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। তাই ব্রিজ থাকলেও সংযোগ সড়কের অভাবে সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জনগণের ব্যবহার ও চাহিদার গুরুত্ব বিবেচনা না করে এ সেতু নির্মাণের ফলে সরকারি অর্থের পুরোটাই অপচয় হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দক্ষিণ পাশে সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড। গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, আদালত চত্বর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ। উত্তর দিকে সিটি করপোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের ভুরুলিয়া এলাকা। পশ্চিম পাশে ত্রিশ ফুট গভীর খাল ও কৃষি জমিসহ পূর্বে কৃষি জমিসহ খাল রয়েছে। সেতুর দুই পাশে সংযোগ রাস্তা না থাকায় মই বেয়ে উঠতে হয় সেতুর ওপর।
ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘সেতু নির্মাণ হয়ে গেলেও রাস্তা ও পাকা সড়ক না থাকায় সেতু ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বর্ষাকালে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বর্ষা শুরুর আগে যদি সেতুর উভয় পাশে রাস্তা করা না যায় তাহলে সেতুটি কোনও কাজে লাগবে না। রাস্তা নির্মাণ করলে সেতুটি কাজে আসবে।’
গাজীপুর শহরের জোড়পুকুর এলাকার শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়ালিদ হাসান লিয়ন ও নওশিন আক্তার মিথিলা জানান, ভুরুলিয়া থেকে প্রতিদিন তাদেরকে স্কুলে যেতে হয়। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন কষ্ট করে সেতু পার হয়ে আসতে হয়। কেন এর দুই পাশে সংযোগ সড়ক হচ্ছে না তা কেউ বলতে পারে না। সেতু থাকতেও কাঠের সাঁকোর মতো বানিয়ে পারাপার হতে হয় আমাদের। অনেক কষ্ট করে পার হয়ে চলাচল করতে হয়। কোনও ধরনের যানবাহন পার হতে পারে না এটি দিয়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখান থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও আদালতে যেতে ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় লাগে। অথচ সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় ব্যয় হয় সরকারি বিভিন্ন দফতরে যেতে। দুই বছর ধরে কষ্ট করছি। এই সেতু দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করে। দেখার কেও নেই। কিছু দিন আগে একবার উদ্যোগ নিয়ে আর সংযোগ দেয়নি। দুই পাশে সংযোগ সড়ক খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।’
জানা গেছে, কোমলমতি শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হয়। কেউ পড়লে সেতুর ৩০ ফুট নিচের পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে পড়তে হবে। তখন আর বাঁচারও উপায় থাকবে না। বাঁশের মাচা দিয়ে সেতু পার হতে গিয়ে চার জনের কোমর ভেঙেছে। এখন তাদেরকে সেই ভাঙা কোমর নিয়ে এই সেতু পার হয়েই হাসপাতালে যেতে হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মজিবুর রহমান জানান, এই সেতুটির দুই পাশে সংযোগ দিচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের লোকজন এটা নিয়ে গড়িমসি করছে। এলাকাবাসী ও ডুয়েট শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শামসুর রহমান মাহমুদ বলেন, ২০২০-২০২২ অর্থ বছরের সিটি করপোরেশন বিশেষ বরাদ্দে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এখনও কেন সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক দেওয়া হয়নি আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ঠিকাদারকে নোটিশ দিয়েছি।